শেষ বিদায়েও আস্থা রাখতে বললেন
একরাশ আশা দিয়ে ঢাকা ছাড়লেন মমতা
বাংলাদেশকে একরাশ প্রত্যাশা আর আশা দিয়ে ঢাকা ছেড়ে নিজ দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ একটি বিমানে চড়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শনিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাকে বিদায় শুভেচ্ছা জানান।
তার আগে বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি সুষম বণ্টন, স্থল সীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময়সহ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ে মীমাংসা করতে ঢাকার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার রাতে বিমান বন্দরে শেষ বিদায়ের সময়ও তার উপর আস্থা রাখতে বললেন। মমতা বলেন, ‘আমার উপর আস্থা রাখুন। বিষয়গুলোর দ্রুত সহজ সমাধানে আমি আমার সাধ্যমত কাজ করব। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দুপুরে সফররত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গণভবনে আপ্যায়িত করেন। দুই বাংলার দুই নেত্রীর মধ্যে অনেকদিন পর সরাসরি কথা হয়, আলাপ হয়। ওই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইলিশ চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানি আসলে, ইলিশ যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী দুই নেত্রীর মতবিনিময় প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈঠকে মমতা বলেন, আমি তিস্তার ব্যাপারটি জানি। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশ আমারও দেশ। আমরা পরস্পরের স্বার্থ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকি এবং স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করি।’
মমতা বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে অচিরেই ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া হবে। চলতি মাসের ২৩ তারিখে ভারতের লোকসভার বাজেট অধিবেশনে তিস্তাসহ অন্যান্য বিষয় উপস্থাপন করা হবে। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। এরপরও আশা করি, চলতি সেশনে চুক্তিটি বাস্তবায়ন হবে। ছিটমহলের জনগণের দুর্ভোগের কথা আমি জানি। আমি সেখানে গিয়েছি। এ বিষয়টিও আগামী সেশনে উপস্থাপন করা হবে এবং পাশ করা হবে।’
ঢাকায় অবস্থিত ভারতের হাই কমিশন গণমাধ্যমকে জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ শুক্রবার রাতে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাকে আপনাদের হৃদয়ে রাখবেন। ছুড়ে ফেলে দিবেন না, যেন।’
জানা গেছে, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টির রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ প্রায় শ’খানেকেরও বেশি বিভিন্ন পর্যায়ের তারকা সমৃদ্ধ দুইবাংলার মিলন মেলায় পরিণত হয় ওই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি। যা ছিল খুবই প্রাণবন্ত। হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ অনুষ্ঠানটি শুরু করলেও পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্য দেন।
এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা সফররত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গবভনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এই তথ্য জানান, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় সমাধান করতে সাহায্য করবে।’ রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব এহসানুল করিম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে শুক্রবার এক আলোচনায় অংশ নিয়ে মমতা বলেছেন, দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কারণে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে তিনি সেতু হিসাবে কাজ করবেন।
মমতা বলেন, ‘কাঁটাতারের বেড়ায় সম্পর্ক ভাগাভাগি হয় না। বাংলাদেশকে আমরা ছাড়তে পারি না। তেমনি বাংলাদেশও আমাদের ছাড়তে পারে না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘দুই দেশ (বাংলাদেশ-ভারত) যাতে ভাল থাকতে পারে, সে জন্য মনের দরজা খুলে দিতে হবে। এতে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। গোটা পশ্চিমবঙ্গ পরিবার আজ আনন্দিত। এপার বাংলা-ওপার বাংলা, দুই বাংলার মধ্যে যতই রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বাউন্ডারি থাকুক, মনের কোনো বাউন্ডারি নেই।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক না হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের গুরুত্ব রয়েছে। কেননা তার সফরে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত মীমাংসার জন্য পশ্চিমবাংলার পক্ষ থেকে যে সহায়তা প্রয়োজন, এই সফরে তা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। পশ্চিমবাংলার পক্ষ থেকে যে সহযোগিতার প্রয়োজন, সেই সহযোগিতা তাদের কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দিবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা সফরে একাধিকবার বলেছেন।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তি, তিস্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চুক্তি হওয়ার বিষয়টি ঝুলে আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী, এখন চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা সহজ হবে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮ জন সফরসঙ্গী ছিল। এর বাইরে আরও (আন-অফিসিয়ালি) ২২ জনসহ তার মোট সফরসঙ্গী ছিল ৪০ জন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনদিনের সফরে আসেন মমতা। এই সফরে তাকে ভিআইপি মর্যাদা দেয় ঢাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে তা আটকে যায়। স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরেও বিরোধিতা ছিল তার। শুধু তাই নয়, ওই একই সময়ে ঢাকা সফর বাতিল করেছিলেন মমতা।
মন্তব্য চালু নেই