আশরাফ-তারানকোর ইমেইলে যোগাযোগ চলছে

সংলাপের বাধা জানাতে মুনকে চিঠি দেবে সরকার

চলমান পরিস্থিতিতে সংলাপের আগ্রহ থাকলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই, এমনটা জানিয়ে শিগগিরই বান কি মুনের চিঠির জবাব পাঠাচ্ছে সরকার। নাশকতা বন্ধ, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা এ সব সংলাপের পথে অন্তরায়। বিএনপিকে সেই পথ পরিহার করতে হবে। এমন কিছু বিষয় তুলে ধরে চিঠির জবাব পাঠানো হচ্ছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে চিঠির জবাব পাঠানো হবে এমনটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অবস্থান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়। এই বিষয়টি এরই মধ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট সব বিষয় উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের লেখা চিঠিতে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলের ভেতরে খুব বেশী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়নি বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের পাঁচজন নেতা। তাহলে কেন জবাব দেওয়া হবে— এ প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, এ চিঠির জবাব দিয়ে রাষ্ট্রীয় সৌজন্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও খুব শিগগিরই এ জবাব পাঠানো হবে।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, সংলাপের আগ্রহ আছে, কিন্তু কী কারণে সংলাপ সম্ভব নয় এবং সংলাপ হতে হলে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ আগে নিশ্চিত করতে হবে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরে চিঠির জবাব দেওয়া হবে। সংলাপের ব্যাপারে সরকার নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক। কিন্তু এ মুহূর্তে সংলাপ অনুষ্ঠান হলে রাজনীতি, গণতন্ত্র সবই হুমকির মুখে পড়বে এমন মনোভাব পোষণ করেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। জঙ্গিবাদ, নাশকতাকারীদের কাছে মাথা নত করা হবে। ফলে সংলাপের ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু পরিবেশ নেই, এমন মনোভাব চিঠিতে তুলে ধরা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

অপর একটি সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, বিএনপির আন্দোলন এবং চলমান পরিস্থিতি, নাশকতা, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো এ সমস্ত চিত্র নিয়ে ক্ষামতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে ইমেইলে জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর কয়েক দফা যোগাযোগ হয়েছে। আশরাফের ঘনিষ্ঠ একজন নেতাও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অপর একটি সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিএনপির আন্দোলন এবং চলমান পরিস্থিতি, নাশকতা, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর এ সমস্ত চিত্র নিয়ে জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সঙ্গে ইমেইলে কয়েক দফা যোগাযোগ করেছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপির আন্দোলন সব ‘ডেড’ ইস্যু নিয়ে। যা মরে গেছে এবং মীমাংসা হয়ে গেছে। সুতরাং মীমাংসিত বিষয় নিয়ে কেন সংলাপ হবে?

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সংলাপের ব্যাপারে যে সব পরিস্থিতি দরকার আগে তা নিশ্চিত হতে হবে তা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে সরকার চিঠি লিখবে। খুব শিগগিরই জবাব পাঠানো হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, পত্র-পত্রিকায় খবর পড়ে জানতে পেরেছি, জাতিসংঘের মহাসচিব সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এর উত্তর দেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন চিঠি দিয়েছে। এর উত্তর যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় চাপের পরে বিদেশী চাপেও পড়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংলাপ চেয়ে জাতিসংঘের চিঠি দেশের চলমান রাজনীতিতে সাধারণ জনগণের ভেতরে অনেক ভাবনার সৃষ্টি করলেও এ ব্যাপারে এখনো অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি ক্ষমতাসীনদের। অবশ্য সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীরা। সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহল জাতিসংঘের চিঠির ব্যাপারে এখনি কোনো কথা বলতে নারাজ। বুধবার সরকারের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিলেও চিঠি নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক কমিটি ও বিভিন্ন কূটনীতিকদের আহ্বানের পরে সর্বশেষ জাতিসংঘের মহাসমুচিব বান কি ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন। সংলাপের ব্যাপারে এটি বড় চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই