বান কি মুনের চিঠি নিয়ে চুপ বিএনপি

দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দ্রুত সংলাপে বসতে দুই নেত্রীকে আহ্বান জানিয়ে লেখা জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের চিঠি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছে না বিএনপি। বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার কাছে জানতে চাইলে তারা এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমেই শুনেছি আমাদের দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ও সহিংসতা নিরসনে দু’দলের মধ্যে দ্রুত সংলাপের তাগিদ দিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দু’নেত্রীর কাছে আলাদা চিঠি দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আমি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না।’

সংলাপের বিষয়ে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নিলে বিএনপি সাড়া দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের শাসনভার হলো আওয়ামী লীগের কাছে। তাদেরই সঙ্কট থেকে উত্তরণে সংলাপের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। দায়িত্বটাও তাদেরই বেশি। তারা উদ্যোগ নিলে অবশ্যই বিএনপি সাড়া দেবে।’

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুই দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।

জেনারেল মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। এ দেশের ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তারপরও জাতিসংঘ যেহেতু সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের উৎকর্ষের জন্য, শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে সেহেতু জাতিসংঘ দু’দলের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। এর আগেও একই ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এসেছিলেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপির চিঠির বিষয়ে বলার কিছু নেই। সরকারই বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। এখন চিঠির আলোকে তারা উদ্যোগ নিক। বিএনপি তখন সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ বিএনপি তো সব সময়ই বলে আসছে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি মূলত সরকারের জন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-সহিংসতা বন্ধ করা, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন প্রধানত সরকারের দায়িত্ব। এখন সরকার বান কি মুনের আহ্বানে কি উদ্যোগ নেয় সেটাই দেখার বিষয়।’

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী কাছে জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, চিঠি এসেছে। সরকারের কাছেও যেমন এসেছে, আমাদের কাছেও তেমনি এসেছে। এটা নিশ্চিত।’

জাতিসংঘের মহাসচিবের সংলাপের আহ্বান নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠির বিষয়ে আমরা তো অবশ্যই পজেটিভ (ইতিবাচক)। আমরা তো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, আমরা সংলাপ চাই। এ বিষয়ে আমাদের দলের স্ট্যান্ট (অবস্থান) খুব স্পষ্ট। নতুন করে বলার কিছু নেই।’

বিএনপি যেকোনো উদ্যোগকেই স্বাগত জানাবে মন্তব্য করে রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এখন সরকার দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের জন্য দ্রুত এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। তারা (আওয়ামী লীগ) ভাবছে, সংলাপ বসলে তারা পরাজিত হবে। এটা ঠিক না। কারণ রাজনীতি যদি হয় জনগণের কল্যাণ, তাহলে এ বিষয়ে হার-জিতের কিছু নেই। তাই সরকারকে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের জন্য দ্রুত জাতিসংঘই হোক আর সাবেক সিইসি শামসুল হুদার উদ্যোগেই হোক—সংলাপের জন্য সাড়া দিতে হবে।’

এদিকে, চিঠি পাওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, ‘শুনেছি চিঠি এসেছে। এ বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু সংকট নিরসনের পদক্ষেপ হিসেবে দ্রুত সংলাপের উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের দেওয়া চিঠির বিষয়ে সরকার স্বীকার করেছে, তাই বলা যায়, হয়তো বিএনপিকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এটা যেহেতু দলের নীতি নির্ধারণীর বিষয়, তাই বিষয়টি আমাকে অবহিত না করলে তো আমি কিছু বলতে পারি না।’

সংলাপের বিষয়ে চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘সংলাপতো বিএনপি সব সময়ই চায়। গত দেড় বছর ধরেই তো বিএনপি সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছে। এখন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ লেবেল (পর্যায়) থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে, এখনও যদি তারা সাড়া না দেয় তাহলে ভবিষ্যৎই বলতে পারে কীভাবে সমাধান হবে।’দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই