স্বাভাবিক হচ্ছে দূরপাল্লার যান চলাচল
অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা টানা ৭২ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে দেশের মহাসড়কগুলোতে দুরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাকি হয়ে এসেছে।
সারাদেশে চিহ্নিত ৯৯৩টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পালাক্রমে নিরাপত্তা টহল জোরদার করেছে। ফলে যান চলাচল প্রথম দিনের চাইতে দ্বিতীয় দিনে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
অবরোধ চলাকালে গত ৫ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহাসড়কগুলোতে ১৪ লাখ ৪ হাজার ২২৫টি যানবাহন চলাচল করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ঢুকছে ৭ লাখ ৩ হাজার ২১টি। আর ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে গেছে ৭ লাখ ১ হাজার ২০৪টি। এর মধ্যে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন রয়েছে।
মহাসড়কে বিভিন্ন ব্রিজে যানবাহনে টোল আদায় ও ফেরিতে ফি আদায়ের তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশন) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানিয়েছেন, মহাসড়কে কড়া নিরাপত্তার কারণে যানবাহন চলাচল এখন আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে জেলা প্রশাসকদের সহায়তাও নেয়া হচ্ছে।
সুত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে ছেড়েছে ২৫ হাজার ৩০৯টি যানবাহন। আর ঢাকায় এসেছে ২৪ হাজার ৮০৭টি যানবাহন। সারাদেশে গড়ে দিনে ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই সংখ্যা ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার পর্যন্ত চলাচল করে।
সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে অবরোধ ও হরতাল চলাকালে সোনা মসজিদ বন্দর দিয়ে ১৫০টি ট্রাক পণ্য নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আর দুপুর ১২টার দিকে কড়া পুলিশ প্রহরায় ১৬২টি যানবাহন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে ৬০টি ট্রাক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রোববার বেনাপোল থেকে ২৫টি বাস, ৩৫০টি ট্রাক ও অন্যান্য ৫শসহ মোট ৮৭৫টি যানবাহন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে। বেনাপোলে গেছে ৩০টি বাস, ৩৫০টি ট্রাক, ৪৫০টি অন্যান্য গাড়ি।
পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যানবাহন দিনেরাতে পারাপার হয়েছে। কড়া পুলিশি প্রহরায় রাতে গেছে ১ হাজার ৫০৫টি গাড়ি। দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া পার হয়েছে ১৬শ’র বেশী যানবাহন।
পুলিশের হাইওয়ের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের মহাসড়কগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের ২৮টি থানা ৪৪টি ফাঁড়ি, ৯টি জোন ও ৪টি অঞ্চল রয়েছে। অবরোধ ও হরতালের মধ্যে হাইওয়ের ২ হাজার পুলিশ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। এর সঙ্গে জেলা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও রয়েছে। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলাচল সচল রাখতে ১১ হাজার ৯১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
গত ২৪ ঘণ্টার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিএনপি জামায়াত জোটের অবরোধ ও হরতালের সময় ঢাকা থেকে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলায় গেছে ২৫ হাজার ৩০৯টি (বাস-ট্রাক) যানবাহন। ঢাকায় এসেছে ২৪ হাজার ৮০৭টি। গড়ে দিনে ৫০ হাজারের বেশি বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস চলাচল করছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে এ সময়ে ১শ’রও বেশি যানবাহনে নাশকতাকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ হাতেনাতে ১৩ নাশকতারীকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে, হরতাল-অবরোধে নাশকতাকারীদের তাণ্ডবে মহাসড়কে ৫ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে ১৮ জন। আর দগ্ধ ও আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭৫জন। এরমধ্যে গ্রেফতারকৃত নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে নাশকতা, বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই