নজর কাড়ল বিশ্বকাপের জমকালো উদ্বোধন
ক্রিকেট মানে বিনোদন। কখনো চার-ছক্কার বন্যা। কখনো বা উইকেট ভাঙ্গার পালা। জয়-পরাজয়ের সংমিশ্রণ। কখনো বা আনন্দ-বেদনার সমারোহ। সেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর মাঠে গড়াচ্ছে মাত্র একদিন পর। অর্থাৎ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ট্রফি জয়ের মিশনে নামবে ১৪টি দল।
ক্রিকেট জ্বরে কাঁপছে গোটা দুনিয়া। প্রিয় দলের খেলা উপভোগ করার অপেক্ষায় রয়েছেন ভক্তরা। এবার আমেজটা একটু বেশিই ওশেনিয়ার দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। ২৩ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে তারা।
১৯৯২ সালে স্বাগতিক দুই দলের অনুভূতি ছিল ভিন্ন। গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় ঘণ্টা বেজেছিল অস্ট্রেলিয়ার। আর নিউজিল্যান্ডের দৌড় ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। যাই হোক, সেসব মাথায় রাখতে চাইবেন না অস্ট্রেলিয়ার ক্লার্ক-স্মিথ-জনসনরা। অপরদিকে, প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের মিশনে নামবে নিউজিল্যান্ড। তাই নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে মুখিয়ে রয়েছেন ম্যাককালাম-উইলিয়ামসন-অ্যান্ডারসনরা।
সব মিলে স্মরণীয় একটি বিশ্বকাপ উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটমোদিরা। তার আগে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সিডনি মায়ার মিউজিক বৌল এবং নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে একই সময়ে বিশ্বকাপের উদ্বোধন হয়ে গেল। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। জমজমাট উদ্বোধনীতে যা ছিল তা নিয়েই পাঠকদের জন্য আমাদের আয়োজন।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে হাজির হন অংশগ্রহণকারী ১৪টি দলের বর্তমান ও প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। প্রথমে সেরে নেওয়া হলো পরিচয় পর্ব। চৌদ্দটি দেশের পতাকা ওড়ানো হয়। সবাই চিহ্নিত করে নেয় তাদের প্রিয় দল।
ক্রাইস্টচার্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়। নিজেদের দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় কেউ তুলে ধরে গান দিয়ে। কেউবা বেছে নেয় তাদের দেশের প্রচলিত নৃত্য।
প্রথমে আফগানিস্তানের এক গায়কের গান দিয়ে শুরু হয় সেই পর্ব। এর ঠিক পরেই বাংলাদেশের পালা। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোধহয় নিজেদের সেভাবে তুলে ধরতে পারলেন না পারফর্মাররা!
ভারত তাদের বলিউডি পারফরম্যান্স তুলে ধরে। গানের সঙ্গে মানানসই ড্যান্সাররা নিজেদের সেরাটা ফুটিয়ে তুলেছেন। পিছিয়ে ছিলেন না শ্রীলঙ্কার পারফর্মাররাও। আকর্ষণীয় নৃত্য পরিবেশন করেছেন তারা। ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের সংস্কৃতি। আর পাকিস্তানের সাদামাটা পারফরম্যান্সের পাশাপাশি মঞ্চ মাতালেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারফর্মাররা। মধ্যপ্রাচ্যের এই প্রতিনিধি দলের হয়ে গানের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন নৃত্যও ছিল চোখে পড়ার মতোই।
ইংলিশরা হাজির হন তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য নিয়ে। পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের ওপর ভর করে নৃত্য পরিবেশন করলেন তারা । স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া বেছে নিয়েছে ব্যান্ড পারফরম্যান্স। নিজস্ব রীতিতে তা পারফর্ম করলেন অসিরা। অপর স্বাগতিক দেশ নিউজিল্যান্ডের পারফর্মাররা নৃত্য পরিবেশন করলেন। নারী-পুরুষের সম্মলিত কিছুটা ‘আগ্রাসী ভঙ্গির’ নৃত্য নজর কাড়ল সবার।
ক্রাইস্টচার্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গাইলেন নিউজিল্যান্ডের সংগীত তারকা হেইলি ওয়েস্টানরা সলথ্রিমি। আলোর বহুমুখী ব্যবহার (লেজার শো) ও আতশবাজির ঝলকানি তো ছিলই। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আতশবাজির অনুষ্ঠান নাকি এটি!
এ ছাড়া মেলবোর্নে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখা হয় চোখ ধাঁধানো আতশবাজি এবং লেজার শো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান আইডলের রানারআপ জেসিকা হিল্ডা মাওবয়, গীতিকার ও সুরকার টিনা এরিনা, শিল্পী নাথানিয়েল ও ড্রায়ল ব্রেথওয়েট পারফর্ম করেন।
মেলবোর্নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে টাইগার দলপতি ব্যবহার করেছেন হেলিকপ্টার। এ সময় মাশরাফির সঙ্গে ছিলেন আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সিডনি মায়ার মিউজিক বৌলের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ হাজারেরও বেশি দর্শক উপস্থিত হন। কম যায়নি নিউজিল্যান্ডও। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চেও মেলবোর্নের সমপরিমাণ দর্শক হাজির হয়েছিলেন।
সিডনি মায়ার মিউজিক বৌলে বিশ্বকাপের ট্রফি উন্মোচন করেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান ওয়ালি এডওয়ার্ডস। এ সময় তিনি বলেন, ‘সেরা দলের জয় হোক।’
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বিশ্বকাপ আয়োজনে তারা যথেষ্ট সৌহার্দপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে মন্তব্য করেন এডওয়ার্ডস।
ক্রাইস্টচার্চের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি ও সেখানকার মেয়র লিয়েনে ডেলজিয়েল। দুই দেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই নাচে-গানে মুখর ছিল। যেখানে তাদের মহাতারকারা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
ক্রাইস্টচার্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ নিয়ে তিনি রোমাঞ্চিত বলে মন্তব্য করেন।
ম্যাককালামসহ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স, শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবার বিশ্বকাপ ট্রফি তারা নিজেদের ঘরের নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন ডি ভিলিয়ার্স, ‘বিশ্বকাপ জিততে এবার আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। এবার আমরা ট্রফি ঘরে নিয়ে যেতে চাই।’
জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা বলেন, ‘টুর্নামেন্ট নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলা এবং ম্যাচ জেতাই হবে লক্ষ্য।’
শনিবার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচটি নিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক ম্যাথুস বলেন, ‘এটা বেশ কঠিন লড়াই হতে যাচ্ছে। যারা নিজেদের সেরাটা খেলবে তারাই ম্যাচ জিতবে।’
মন্তব্য চালু নেই