ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ইসিতে ফের তোড়জোর
আইনি জটিলতায় প্রায় সাত বছর আটকে থাকা ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর জন্য বাজেটে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা সংস্থান রাখার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি।
কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচন করতে সংস্থানকৃত ৫০ কোটি ছাড়াও চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে নির্বাচন ব্যয় খাতে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৯৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ডিসিসি (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচনের জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সীমানা জটিলতায় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। তাই ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ছাড়াই বাজেট প্রস্তাব করে ইসি। কিন্তু রোববার সংশোধিত বাজেটে ওই নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত করে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তবতা নিরীখে নিয়মিত নির্বাচন বাজেটের প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়ন করে থাকে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিক বাজেট প্রাক্কলন অর্থ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগে প্রেরিত সংশোধিত প্রাক্কলনের ওপর অনুষ্ঠিত সভার মাধ্যমে কমিশনের নির্বাচনী ব্যয় খাতে ৫০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল হয় এবং আদালদের নির্দেশে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। গত ১৩ মে উচ্চ আদালত রিটটি খারিজ করেন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানা জটিলতার কারণে পুনরায় আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সরকার সীমানা জটিলতা নিরসন করলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ব্যয়সহ অন্যান্য নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ‘নির্বাচন ব্যয়’ খাতে মোট ৯৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচিত ডিসিসির মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হলেও সাত বছর ধরে বিভিন্ন কারণে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি ইসি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কারণেই নির্বাচন করতে পারছে না বলে ইসি বরাবরই অভিযোগ করেছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, শুধু রাজনৈতিক কারণেই নির্বাচন বিলম্বিত হয়েছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুসারে, নতুন করপোরেশন গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে এবং নির্বাচিত করপোরেশন বিদ্যমান থাকলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার আগে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে ২০০৭ সালের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সেটা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে দু’ভাগ করা হয়। ২০১১ সালের শুরুতে নির্বাচন করার কথা ভাবলেও ডিসিসিকে ভেঙে দুই ভাগ করা হলে সীমানা জটিলতা শুরু হয়। পরে সরকার দুই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে। বর্তমানে প্রশাসকের মাধ্যমেই নিয়মিত কাজ চলছে।
এদিকে নতুন বছরের শুরুতে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়নি।
মন্তব্য চালু নেই