সুন্দরবনের ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম : বনমন্ত্রী
শ্যালা নদীতে তেল ট্যাংকার-ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে ‘আশঙ্কার চেয়ে কম ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
তেলবাহী ট্যাংকার-ডুবির ১০ দিন পর শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল- এখন দেখে মনে হচ্ছে, তা অনেক কম। পরিস্থিতি যতটা খারাপ মনে করেছিলাম, আসলে ততটা খারাপ নয়।’
এখনো কোনো জলজ বা বন্য প্রাণী মারা যায়নি- দাবি করে মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। তার পরও এই ফার্নেস অয়েলে দীর্ঘ মেয়াদে সুন্দরবনের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে- সে আশঙ্কা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার।’
তিনি আরো বলেন, ‘নদী-খালে তেল ছড়িয়ে পড়ায় শ্যালা নদীর দুই পাড়ের গাছে এখনো তেল লেগে আছে। যেসব গাছের শ্বাসমূলে তেল ঢুকে রয়েছে সেগুলো হয়তো আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যাবে। তবে কিছুদিন পর ওইসব স্থানে আবারও নতুন করে গাছ জন্মাবে।’
এ সময় ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে সহযোগিতাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে এ কাজ আরো এগিয়ে নিতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেন তিনি।
ভেসে যাওয়া তেলে ভবিষ্যতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর ওপর প্রভাব পড়বে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে খুব শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করবে। ওই গবেষণা ছাড়া এখনই কিছু বলা যাবে না। ওই সব সংস্থার গবেষণায় ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সরকার করণীয় নির্ধারণ করবে।’
সুন্দরবনের ভেতরের নৌ-রুটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এই রুট বন্ধ করা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে আন্তমন্ত্রণালয়কে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি চাই, এই পথ দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ হোক।’
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সি-প্লেনে করে তিনি সুন্দরবন পরিদর্শনে আসেন। এ সময় মংলা নদীর নারকেলতলা এলাকায় নেমে স্পিডবোটযোগে ট্যাংকার-ডুবির ঘটনাস্থল শ্যালা নদীর জয়মণি বাদামতলাসহ অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি আবারও সি-প্লেনে চেপে ঢাকার উদ্দেশে সুন্দরবন ত্যাগ করেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান, প্রধান বনসংরক্ষক মো. ইউনুস আলী, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাইসুল আলম মণ্ডল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র সরকারসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১০ ডিসেম্বর ভোর ৬টার দিকে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে তেলবাহী ট্যাংকারকে এমটি টোটাল নামে অন্য একটি কার্গো ধাক্কা দিলে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ট্যাংকারটি ডুবে যায়।
মন্তব্য চালু নেই