তসলিমার নষ্ট রুবেল : হ্যাপি কি?
বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি’র দায়ের করা নারী নির্যাতনের মামলার পর আলোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। মামলার দিনই হ্যাপিকে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে । এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই হয়তো রিপোর্ট দেয়া হবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ বিষয়ে এখনিই কিছু বলতে চাইনি। রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিলাম। এরই মধ্যে লেখিকা তসলিমা নাসরিন চিত্রনায়িকা হ্যাপি’র পক্ষে এবং ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তালঘোল পাকিয়ে দিলেন। একজনকে তুলশি পাতা দিয়ে স্নান করালেন, অন্যজনকে সোডা দিয়ে ধুইলেন। লেখিকা তসলিমা নাসরিন আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তাকে আমি পছন্দ করি। সে একজন ভালো লেখিকা এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সেই বিশ্বাস থেকেই বলতে চাই। এই লেখাটি ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশের পর লিখলে অনেক ভালো হতো।
সত্য এড়িয়ে মিথ্যা লেখার সাহস আমার নেই। আমার অবস্থান বরাবরই সত্যের পক্ষে। আমি পুরুষ তাই বলে পুরুষের পক্ষ নেব আর নারীর পক্ষ নেব না। এটা সচেতন নাগরিকের হওয়া উচিত নয়।
আমি মনে করি একজন সুন্দর মনের মানুষের প্রেম- ভালোবাসা থাকবে। তাদেরকে নিয়ে নানা লোকে নানান কথা বলবে। তাই বলে প্রেম ভালোবাসা থেমে থাকে না। ভালোবাসায় জড়ানোর পর সম্পর্ক কারো মধুর হয় আবার কারো তিতো হয়। সেই বলে ভালোবাসার পছন্দের মানুষকে জটিলতায় ফেলে ভালোবাসা পাওয়া কিংবা জোর করে আদায় করাকে কোন ধরনের প্রেম-ভালোবাসা বলে তা আমার জানা নেই। অনেকেই বলে এটা এক ধরনের প্রতারণা। আমি প্রতারণা বলি না কারণ কেউ যদি বেশি ভালোবাসে সেই ভালোবাসায় সে নেশাগ্রস্ত হয়ে দিকনির্দেশনা হারিয়ে ফেলে। এটা এক ধরনের ভুল। এই ভুল একজন ব্যক্তি করতে পারে। যখন সবাই মিলে করে তখন সেটা আর ভুল থাকে না। তখন সেটা প্রতিযোগিতা। বর্তমানে হ্যাপি ও রুবেলের ঘটনা তাই। এ প্রতিযোগিতায় কে জিতবে বলতে পারছি না তবে আমার বিশ্বাস সত্য জিতবে। তসলিমা নাসরিন বলেছেন, ‘মেয়েদের স্বাধীনতায় তিনি ১০০ ভাগ বিশ্বাস করেন। আমিও এ বিশ্বাসের সাথে একমত কিন্তু একটি যায়গায় দ্বিমত পোষণ করছি যেমন তসলিমা নাসরিন বলেছেন হ্যাপি দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে, রুবেলের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পকের্র কথা। তাকে ধর্ষণ করার কথা। লজ্জায়, আশঙ্কায় সে একা একা কাঁদেনি। এ খুব ভালো কাজ। কিন্তু শুয়েছে বলে বা ধর্ষিতা হয়েছে বলে তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেল, এমন ভাবাটা ঠিক নয়। আমার প্রশ্ন তসলিমা নাসরিন হ্যাপির কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এ কথাগুলো বলেছেন। তার এই বিশ্বাসের যায়গায় বিন্দুমাত্র কমতি নেই। আমি আশা করি তাঁর বিশ্বাসের জায়গাটা ঠিক থাকুক। মামলার বিষয়ে হ্যাপি’র বিভিন্ন কথায় আমার সন্দেহ লাগে। আমার মনে হয় তারা দু’জনেই সত্য কথা বলছেন, তবে পরিমাণ কম বেশি। দীর্ঘদিন দেশের নারী নির্যাতনের মামলার দিকে তাকালে ভিকটিমের প্রতি বিশ্বাস একটু কমে যায়। হ্যাপি যে বিশ্বাস থেকে মামলা করেছে সে বিশ্বাসে যদি কমতি না থাকে তাহলে হ্যাপির মামলা করাকে সাধুবাদ জানাই। এ মামলায় হ্যাপি উপকৃত না হলেও জাতি উপকৃত হবে। প্রেম ভালোবাসার নামে শরীর বেলানো কত বড় ভুল।
চিত্রনায়িকা হ্যাপি বার বার বলার চেষ্টা করেছেন রুবেল হোসেনকে সে খুব ভালোবাসে। হ্যাপি রুবেলকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চায়। খুব সুন্দর একটি কথা, এই কথাটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলতে চাই, প্রেম ভালোবাসা এমন এক বস্তু কোন বাধাই মানে না। যাকে মন দিয়ে ভালো বাসা যায় তার কি কখনও ক্ষতি করা যায় ? চিত্রনায়িকা হ্যাপি’র করা মামলায় রুবেল হোসেনের বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে রুবেলকে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় হ্যাপি এখন ‘আনহ্যাপি’। এ মামলায় হ্যাপি’র কোন উপকার হয়নি বরং সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই হ্যাপি নিজের অজান্তে মামলা নিয়ে দুই রকম কথা বলেছেন। যেমন হ্যাপি ধর্ষণের মামলা দায়েরের দুই দিন পর বলেছেন, আমি থানায় প্রতারণার মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাকে এ সম্পর্কে বুঝিয়ে ধর্ষণের মামলা দায়ের করিয়েছেন। এসব কথা বলে বর্তমানে হ্যাপি নিজেও বিব্রত। হ্যাপির কথা অনুযায়ি সমঝোতা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মামলা তুলে নিবেন তিনি। তাহলে কি জোর করে রুবেলকে পেতে চান অভিনেত্রি হ্যাপি। যদি তাই হয় তাহলে বলার কিছু নেই। আর কবি-সাহিত্যিকরা জোর করে ভালোবাসা হয় না নামে যেসব গল্প-কবিতা-উপন্যাস লিখেছেন এবং নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সেই অনুযায়ি বলতে পারি রুবেল ও হ্যাপীর সম্পর্কের ফাটল হয়ে সাগরে পরিণত হয়েছে। তাই হয়তো লেখিকা তসলিমা নাসরিন বুঝতে পেরে বলেছেন। যা ইচ্ছে তা-ই করুক, কিন্তু ভুলেও যেন রুবেলকে বিয়ে না করে। এই লেখার একদিন পর ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে বিয়ে করতে সত্যিই অস্বীকৃতি জানিয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি। আমার ধারনা তার ভুল বুঝতে পেরেই হয়তো সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তাই বলতে চাই, এত কিছুর পর এই সিদ্ধান্ত, আগে নিলে কি হতো। একটা কথা বোঝা উচিৎ মামলা করে জমি-জমার মীমাংসা হয়। আর ভালোবাসার কাট-ছাট হয়। এ ছাড়া কিছুই হয় না। আবেগ দিয়ে ভালোবাসা যায়। ফয়সালা হয় না।
ভালোবাসা অনেক বড় এবং মহৎ একে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। আমরা ভালোবাসা বুঝি না। ভালোবাসতে জানি না। ভালোবাসা লিখতে ও বলতে যত সহজ বাস্তবে অনেক কঠিন। আমরা এখন ভালোবাসাকে অর্থ, দেহ ও জোর করে পেতে চাই বলেই হোচট খাই। এটা সমাজের এক ধরনের ব্যাধি। এসব থেকে আমরা বেরুতে না পারলে পবিত্র ভালোবাসার সম্পর্ক কিছু মানুষের কাছে নষ্ট হয়ে থাকবে। যেমন তসলিমার কাছে রুবেল এখন নষ্ট ছেলে।
মন্তব্য চালু নেই