‘বড় দুঃখ, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারি নাই’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমার জীবনের বড় দুঃখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস, বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করে যেতে পারি নাই। এটাও আমার বড় দুঃখ।
শনিবার জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য আনা প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন শিরিন আখতার। পরে রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলার পর প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়।
এরশাদ বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম। ১৯৬৯ সালে আমি ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল পদে উন্নীত হই। আমি সৈয়দপুরে ছিলাম। তখন পাকিস্তানিরা সমস্ত বাঙালি অফিসারদের পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল। সেই সুবাধে ১৯৭০ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমাকে বদলি করা হল পাকিস্তানে। করাচিতে, মালির সেনানিবাসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারপর আমি একমাস ছুটি নিয়েছিলাম এবং পাকিস্তানে গেলাম। তখন ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ, তারপর শুরু হল মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধ। আমি তখন ছুটিতে ছিলাম, জেনারেল ওসমানী সাহেবকে টেলিফোন করেছিলাম, আমি এখন কি করব? আমাকে বদলি করা হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। উনি বলেছিলেন, এখনও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। তুমি নির্দেশ পালন কর, তুমি সেনানিবাসে ফিরে যাও। আমাকে ফিরে যেতে হয়েছিল। যারা সৈনিক আছেন তারা জানবেন, এ নির্দেশ অমান্য করার তখন কোন উপায় ছিল না।’
‘তবে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যদি কোনদিন সুযোগ পাই, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সব কিছু করে ঋণ পরিশোধ করব-এমন মন্তব্য করে মুক্তি্যোদ্ধাদের নিয়ে নিজের সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাসের নাম বঙ্গবন্ধু। আমাদের জাতির পিতা। জাতির পিতা কোনো দল বা কোনো গোষ্ঠীর নিজস্ব সম্পদ নয়। বঙ্গবন্ধু আমারও পিতা, আপনারও পিতা, সবারই পিতা। উনি সার্বজনীন।’
তিনি বলেন, ‘তার (বঙ্গবন্ধুর) অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানে একটি স্বাধীন দেশ। যার জন্ম না হলে আমি সেনাবাহিনীর প্রধান হতে পারতাম না। যার জন্ম না হলে রাষ্ট্রপতি হতে পারতাম না। যার জন্ম না হলে এ সংসদে বক্তব্য দিতে পারতাম না। তার ঋণ কি করে আমি শোধ করব।’
ব্যক্তিগতভাবে আমি জাতির জনকের কাছে ঋণী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বন্দি শিবিরে ছিলাম। বন্দি বিনিময় চুক্তির কারণে আমি ফিরে আসতে পেরেছি। আমি প্রথম রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়ে ফুল দিয়েছিলাম, শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুঃখ একটা আছে, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে পারিনি। আমি চেয়েছিলাম, মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবও এনেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ঋণ শোধ করতে চেষ্টা করি। কয়েকজনের বিরোধিতায় পারিনি। সেই দুঃখ নিয়ে আমাকে মরতে হবে।’
এরশাদ বলেন, ‘প্রতিবছর গোটা বিশ্বকে জানাতে হবে, পাক হানাদার বাহিনী আমাদের দেশে কিভাবে গণহত্যা করেছিল। আমাদের অস্তিত্ব কিন্তু আমরা এখনও বেঁচে আছি, মাথা উঁচু করে বেঁচে আছি। এগিয়ে চলেছি আমরা।’
মন্তব্য চালু নেই