‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৭ ভাগ এলাকা ডুববে তা সত্য নয়’
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে নাকচ করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও আলোচকরা। তারা বলেছেন, যত দিনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, তত দিনে বাংলাদেশ উপকূল রক্ষার কৌশল রপ্ত করে ফেলবে। দেশের ১৭ শতাংশ এলাকা ডুবে যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও সত্য নয়। তবে আশঙ্কা আছে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের আইপিডি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ ও আলোচকরা এ কথা বলেন। জলবায়ুর অভিঘাত হতে বাংলাদেশের উপকূল সুরক্ষা : বর্ষায় সামুদ্রিক জোয়ারের প্লাবন থেকে রক্ষায় করণীয় শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ও কোস্ট ট্রাস্ট।
আলোচনায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, উপকূলকে কীভাবে রক্ষা করতে হবে, সে বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে চায়। কারণ, এ বিষয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা ডুবে যাবে। এটা সত্য নয়। বাঁধ না থাকলে বাংলাদেশ ডুববে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকায় ১২ থেকে ১৫ ফুট উঁচু বাঁধ আছে। একমাত্র জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে পারে। কিন্তু তত দিনে বাংলাদেশের পক্ষে অধিক উঁচু ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা কঠিন কোনো কাজ হবে না।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ বলেন, সমুদ্রের উচ্চতা ১ ফুট বাড়লে বাংলাদেশের ১৭ ভাগ উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সে জন্য ১০০ বছর লাগবে। এ আশঙ্কা সামনে রেখে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সংস্কার করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দক্ষ। তাদের অলস বসিয়ে না রেখে এ কাজে লাগালে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এ জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারের একটি লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এর ওপরই আলোচকেরা আলোচনা করেন। ওই লিখিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ৩৫টি সাইক্লোনের মধ্যে ১৬টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করেছে। এতে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সংখ্যা সারা বিশ্বের সাইক্লোনে নিহত মানুষের ৫৩ শতাংশ। সাইক্লোনের কারণে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে উপকূলের ৫০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ঢাকার বস্তিবাসীর ৭০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু।
জলবায়ুর পরিবর্তন খাদ্যনিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাপমাত্রার তারতম্য খাদ্য উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আলুর উৎপাদন কমে যাবে ৬০ শতাংশ। কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বেড়ে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সুন্দরবন উত্তর দিকে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গেছে। ফলে এই এলাকায় নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেড়েছে। ১২৩টি বাঁধের মধ্যে ৪৪টি ঘূর্ণিঝড়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। বর্তমানে সাতক্ষীরার ৭৫ শতাংশ, খুলনার ৩২ শতাংশ, বরগুনার ৭২ শতাংশ এবং বাগেরহাটের ৬৬ শতাংশ এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট রয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, উপকূল রক্ষায় স্বল্প মেয়াদি ও দ্রুত করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষার জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে নদী খননসহ টেকসই ও বিজ্ঞানসম্মত বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ করতে হবে। দখলমুক্ত করতে হবে নদী ও খাল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গণমুখী মনোভাব গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকারের নিকট জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় এ সেমিনারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম, এমপি পঞ্চানন বিশ্বাস, শেখ মো. নুরুল হক, পঙ্কজ নাথ, দিদারুল আলম ও জেবুন্নেসা আফরোজ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য চালু নেই