সুন্দরবন রক্ষায় ৩ দফা দাবি

বনখেকোদের পক্ষে কথা বলছেন নৌমন্ত্রী

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলের কারণে ওই অঞ্চলের জেলেসহ বিভিন্ন পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, শ্যালা ও পশুর নদীসহ সকল নদীতে তেল ও কয়লা বহনকারী বাণিজ্যিকভাবে নৌ-চলাচল বন্ধ এবং রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য এ তিন দফা দাবি জানানো হয়।

তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটি মহাসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মন্ত্রীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বক্তব্য দিয়ে। তারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা দায়িত্বহীন ও অপরাধমূলক।’

তিনি বলেন, ‘বনের স্বার্থের বিপরীতে কিছু মানুষ আছে যারা বন উজাড় করে জমি বানাতে চায়, নদী ভরাট করে জমি বানাতে চায় এবং বনের জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে চায়, বনের জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে চায়, তারা বন ধ্বংস করে কোটি টাকা মুনাফা করতে চায়। নৌমন্ত্রী সেসব মানুষদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কথা বলছেন। সরকার সুন্দরবনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা না করে আরো ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের ভূমিকার কারণে সুন্দরবন এখন মহাবিপদের মধ্যে আছে।’

সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়নি এবং কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি দাবি করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যদি সরকার তা না করে তবে জনগণের দায়িত্ব হলো সেই কাজ করা। কারণ সরকার তো অস্থায়ী আর সুন্দরবন স্থায়ী।’ প্রয়োজনীয় ক্ষতি নিরুপন করে এবং অস্বীকৃতির সংস্কৃতি থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও দ্রুত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করার অনুরোধ জানান তিনি।

এসময় তিনি সুন্দরবন রক্ষায় তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- ক্ষতি যেটা হয়েছে ক্ষতিপূরণকে মোকাবেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত বন ও ক্ষতিগ্রস্ত বনজীবী মানুষদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা; যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনা; যেসব নৌপথ সুন্দরবনের জন্য হুমকি স্বরূপ সেসব নদী শ্যালা ও পশুর নদীপথসহ সকল নদীতে নৌ রুটে ভারী যান চলাচল বন্ধ করা এবং রামপাল ও ওরিয়ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা কীভাবে ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ছে তার একটি সচিত্র প্রতিবেদন দেখানো হয়। এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী শেখ কল্লোল মোস্তফা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তেল প্রথমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যেসব গরীব মানুষ নদী থেকে তেল তুলছেন তাদেরকে আবার কম দাম দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তাদের দেয়া হয়নি কোনো ধরনের হাত ও পা মোজা। ফলে তারা ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে।’

তিনি বলেন, ‘তেল যাতে না ছড়াতে পারে এজন্য ওই জাহাজের চারপাশে তেলরোধক বুম ব্যবহার করা যেতো। কিন্তু তা না করে পরবর্তীতে জাহাজ উদ্ধারের পর তা ব্যবহার করা হয়। এই বুম প্রথমে ব্যবহার করা হলে এতো ক্ষতি হতো না সুন্দরবনের।’

ফার্নেস তেল আপনা আপনি সরে যায় না বা বাষ্পও হয় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে তারাও হয়তো জানেন না যে, এই তেল না তুলে নেয়া হলে কখনোই বাষ্প বা নিজেই পরিষ্কার হবে না।’

ফার্নেস তেল না সরানো হলে ভবিষ্যতে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে এমন মন্তব্য করে কল্লোল মোস্তফা বলেন, ‘যেসব গাছের গোড়ায় এই তেল জমে থাকবে সেটি মারা যাবে। এক কথায় ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্রের অস্তিত্ব আর থাকবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তানজিমুদ্দিন খান, ড. আবুল বাসার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদের বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই