১০ টাকা কেজির চাল পাচ্ছেন চেয়ারম্যানের বাবা, ভাই ও চাচা
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি মূল্যের ৩০ কেজি চাল প্রাপ্তদের তালিকাসহ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে এই তালিকায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিলকুল গ্রামের চেয়ারম্যানের বাবা, ভাই ও চাচা ১০ টাকা কেজির চাল পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, কচুয়া ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের নামের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাদের আত্মীয়-স্বজন, দলীয়করণ, নিজ পরিবারের নামে-বেনামেসহ একই পরিবারে দু-তিনজনের নাম, সরকারি চাকরিজীবী, ভিজিডি কার্ডপ্রাপ্ত, শাসকদলের নেতাকর্মী ও বিত্তবানদের নামে তালিকা করে ১০ টাকা দরে চাল বিতরণ করছেন। এসব এলাকার ডিলাররা মাপেও কম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে গোপালপুর, মঘিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে চাল মাপে কম দেয়া ও রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নে কার্ড বিতরণের সময় কার্ডপ্রতি ১০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের ১ হাজার ৭৩০ জন হতদরিদ্রের নামের তালিকার মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিলকুল গ্রামের ৮৭১ নম্বর সিরিয়ালে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যানের বাবা সুলতান আলী নকীবের নাম। পাশাপাশি ১৩৪২ নম্বর সিরিয়ালে তার চাচা জালাল নকীবের নাম। সেই সঙ্গে চেয়ারম্যানের ভাই নকীব শহিদুল ইসলামের নাম রয়েছে ২২ নম্বর সিরিয়ালে।
এছাড়া বাধাল ইউনিয়নে বিত্তবান, শাসকদলের প্রভাবশালী, সরকারি চাকরি এবং ভিজিডি কার্ডধারীদের নাম রয়েছে ১০ টাকা কেজি মূল্যে চাল প্রাপ্তদের তালিকায়। বিলকুল গ্রামের বাসিন্দা নকীব কবির হোসেন এবং তার স্ত্রী মমতাজ বেগম দুজনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক।
এই ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ হাবিবুর রহমানের সিরিয়াল নম্বর ২১৮, যশোরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পানবাড়িয়া গ্রামের তপন কুমার সরকারের সিরিয়াল নম্বর ৫২৯, পানবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপর সহকারী শিক্ষক শেন ভিস্ম রঞ্জনের সিরিয়াল নম্বর ৫৪২, মসনী গ্রামের মসনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কৌশিক দাসের মা সরকারি চাকরিরত এবং স্ত্রী মিতা রানী দাস মসনীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তার সিরিয়াল নম্বর ১৩৮১।
আলোকদিয়া গ্রামের ডাক্তার হিমাংশু দাসের ছেলে মসনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সুরঞ্জিত দাস সিরিয়াল নম্বর ১১৭০। বিলকুল গ্রামের আতাহার মোল্লার ছেলে বাবলু মোল্লা গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরিরত। তার সিরিয়াল নম্বর ২২০। সাহেবালী শেখের ছেলে শেখ মোকাম্মেল হোসেন পল্লীবিদ্যুতে চাকরিরত। তার সিরিয়াল নম্বর ৪৭৯। পিংগড়িয়া গ্রামের ট্রাকের মালিক মসিউর রহমান কোটাল। তার সিরিয়াল নম্বর ৮৯১।
এছাড়া বিলকুল গ্রামের শতাধিক বিঘা জমির মালিক গৌতম কুমার দেবনাথের সিরিয়াল নম্বর ০৪। নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথের সিরিয়াল নম্বর ১৬। সমাজ সেবা কর্মকর্তার স্ত্রী রাশীদা বেগমের সিরিয়াল নম্বর ২২। ইউপি সদস্য আঃ বারেক পাইকের ছেলে সোহেল পাইকের সিরিয়াল নম্বর ১১৮। বিলকুল গ্রামের বিত্তবান মো. সাহেব আলী শেখের সিরিয়াল নম্বর ১৭৫। স্বাস্থ্য পরিদর্শক কোটাল হেমায়েতের সিরিয়াল নম্বর ৯৭৪।
অথচ বিলকুল গ্রামে দিনমজুর হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী আমজাদ আলীর নাম নেই ১০ টাকা কেজি মূল্যের চালের তালিকায়। এরকম শত-শত হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করে বিত্তবান, সরকারি চাকরিজীবী, শাসকদলের লোকজন এসব চাল হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল জানান, অল্প সময়ে তালিকা তৈরি করতে যেয়ে ভুল হয়েছে। তবে তার বাবা ও চাচা এবং ভাইয়ের নাম তালিকায় লিপিবদ্ধ হবার বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মন্তব্য চালু নেই