শিক্ষকদের চাঁদা কেনা সেই ‘সোনার হরিণ’ ফেরত দিলেন ইউএনও
শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ‘উপহার’ দেওয়া সেই সোনার হরিণ ফেরত দিয়েছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান। শুক্রবার বেলা ১১টায় তার কার্যালয়ে শিক্ষক নেতাদের হাতে ওই ‘উপহার’ ফেরত দেন তিনি। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর তিনি এই উদ্যোগ নেন।
কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেই টাকায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারকে সোনার নৌকা, হরিণ ও শিক্ষা মনোগ্রাম উপহার দেওয়ার অভিযোগ উঠে। বুধবার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিদায় ও ইউপি চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চুকে সোনার নৌকার মনোগ্রাম, ইউএনওকে সোনার হরিণের কোটপিন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার আনিসুর রহমানকে সোনার শিক্ষা মনোগ্রাম উপহার দেওয়া হয়। বৃহস্পাতিবার এই খবর প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনা হওয়ায় শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে হরিণের নকশা করা সোনার কোটপিন ফেরত দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র মণ্ডল, শিক্ষক নেতা হারুণ অর রশিদ ও মো. বাবলু আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ওই সোনার হরিণের কোটপিনটি ফেরত নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ের স্মারকযুক্ত এ সংক্রান্ত এক অফিসিয়াল চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘১২ অক্টোবর নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদায় এবং সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সোনার নৌকা ও আমাকে স্বর্ণের হরিণের কোটপিন উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা, সৌন্দর্য এবং আয়োজকদের সম্মান রক্ষার্থে আমি তাৎক্ষণিক উক্ত উপহারটি গ্রহণ করি। আমি একজন সরকারি কর্মচারী। আমি উক্ত উপহার গ্রহণ করতে পারি না। তাই আমি উক্ত উপহার সোনার হরিণটি বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের কাজে ব্যবহারের জন্য ফেরত প্রদান করলাম।’
এই চিঠির কপি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের কাছে এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদেরকেও দেওয়া হয়েছে এর ছায়ালিপি।
উল্লেখ্য, বুধবারের ওই অনুষ্ঠানে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন আ‘লীগের সভাপতি অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, বিশেষ অতিথি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনিসুর রহমান ও ইউনিয়ন আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চুকে অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণের এসব উপহার দেওয়া হয়েছিল।
অভিযোগ ওঠে, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে ২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ বিদ্যালয়গুলো হতে ২ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়েছে চেয়ারম্যান, ইউএনও ও শিক্ষা অফিসারের জন্য তৈরি করা স্বর্ণালংকারের ব্যয় মেটাতে। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কর্মস্থলে ঝামেলায় পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু বলেন, ‘কোনও ধরনের চাঁদার মাধ্যমে এমন অনুষ্ঠান করা হয়নি।’ ব্যক্তিগতভাবে ভালোবেসে কোনও উপহার দিলে তাতে কোনও বাধা নেই বলে তিনি জানান। -বাংলা ট্রিবিউন।
মন্তব্য চালু নেই