আত্রাইয়ে ঐতিহ্যবাহী কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের বধূরা

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : আমাদের দেশ বাংলাদেশ ছয়টি ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুর মধ্যে শীতকাল অন্যতম। রসনা বিলাসীদের মধ্যে এই মৌসুমে অনেক কিছুরই সমোরাহ ঘটে। নওগাঁর আত্রাইয়ে বধূরা শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে চির চেনা একটি জনপ্রিয় খাবার কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতের বার্তার সাথে সাথে গ্রামের মহিলারা পারিবারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে বড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরে বিশেষ করে হিন্দু পরিবারের গৃহবধুরা মৌসুমি খাদ্য হিসাবে কুমড়া বড়ি তৈরি করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গৃহবধুদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চাল কুমড়া ও মাষকালাইয়ের ডালই এ বড়ি তৈরির প্রধান উপাদান। এছাড়াও কিছু মসলার সংমিশ্রণে তৈরী করা হয় ‘কুমড়া-বড়ি‘। খাবারের আলাদা স্বাদ আনতে যার জুড়ি মেলা ভার। চাল-কুমড়ার মিশ্রণ থাকায় সম্ভবত এর নাম হয়েছে ‘কমড়া-বড়ি‘। এ কুমড়া বড়ি শীত মৌসুমে তৈরি এবং বিক্রি করা হয়ে থাকে। যা সাড়া বছরের খাদ্য হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সবজি তরকারি ছাড়াও প্রায় সব তরকারিতে এই খাদ্য সহযোগী উপাদান হিসাবে ও আলাদা ভাবে ভর্তা করেও কুমড়া বড়ি খাওয়া যায়। আত্রাই উপজেলার পালপাড়া গ্রামের কয়েকজন গৃহবধুর সাথে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুমে তাদের পাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। কুমড়া বড়ি তৈরির পর স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ নাটোর, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, রাজশাহী জেলার দোকানিরা এসে পাইকারী কিনে নিয়ে যায়। এতে করে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় বলেও জানান তারা। উপজেলার সাহেবগঞ্জ পালপাড়া গ্রামের গৃহবধু অঞ্জলী রানী বলেন, কুমড়া বড়ি তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসাবে মাশকালাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয়। প্রথমে সারা রাত পানিতে মাশকালাই ডাল ভিজিয়ে রাখার পর তা পাটাতে পিষে প্রতিদিন রোদে পাতলা কাপড়ের উপর শুকাতে দিতে হয়। দেড় থেকে দুই সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর কুমড়া বড়ি খাওয়ার উপযোগী হলে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় করা হয়। আবার কখনো কখোন বড় বড় মহাজন ও ছোট ছোট দোকানিরা নিজেরাই এসে কিনে নিয়ে যায়। একই গ্রামের কুমড়া বড়ি বিক্রেতা নারায়ন চন্দ্র বৈরাগী, কালী চন্দ্র, পরেশ চন্দ্র বলেন, আমরা মাশকালাই থেকে আসল কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মানের কুমড়া বড়ি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কুমড়া বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময়। এই দুই মাসে যে পরিমান কুমড়া বড়ি সংগ্রহ করা হয় তা বছরজুড়ে বিক্রি করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে উপজেলার সচেতন মহল মনেকরেন ঐতিহ্যবাহী এই খাদ্যটি তৈরী করে যারা জীবিকা নির্বাহ করছে সরকার স্থানীয়ভাবে সহজ শর্তে ঋণদান করলে তারা এটাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে করতে পারেন।



মন্তব্য চালু নেই