রাণীনগরে প্লাস্টিকের তৈরি মাদুর বিক্রির ধুম ॥ চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরে ত্রিমোহনী হাটে প্লাস্টিকের তৈরি রং বে-রঙের বাহারি চোখ ধাধানো মাদুর বিক্রির ধুম পড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এই হাটে মাদুর কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান করছে। ক্রেতা-বিক্রেতার দিনদিন আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় জমে উঠেছে উপজেলার এই একমাত্র প্লাস্টিকের তৈরি মাদুর বিক্রয়ের হাট। সপ্তাহের দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার কাক ডাকা ভোর থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি বেচা-কেনার ধুম পড়ে যায়। এখানকার হাতে তৈরি নিপুন বাহারি কারুকার্যে ভরা মাদুরগুলো মানসম্পূর্ণ এবং দামে কম হওয়ায় এর চাহিদাও ব্যাপক।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার পাতি দিয়ে তৈরি পরিবেশ বান্ধব মাদুরের দেশজুড়ে খ্যাতি থাকলেও হঠাৎ করে গত দুই তিন বছর আগে ত্রিমোহনী এলাকায় তিনটি প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির মিল স্থাপন হওয়ার পর থেকে পাতি দিয়ে তৈরি মাদুরের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুরের চাহিদা দিনদিন বেশি হওয়ায় উপজেলা সদর, বাহাদুরপুর চকমুনু, ত্রেমোহনী, মিরাট, দূর্গাপুর, বেতগাড়ি, করজগ্রাম এলাকায় শত শত বেকার তরুন তরুনী প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করে বাজারের বিক্রয়ের মাধ্যমে ভাল আয় করছে। বেকার থাকা মানুষগুলো ম্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প শ্রমে এক একটি পরিবার যৌথ ভাবে প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করে জীবন-জিিবকা নির্বাহ করছে। প্লাস্টিকের মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ (পাইপ) মিল মালিকরা প্রতি কেজি একশত দশ টাকায় খুচরা বিক্রয় করে। তিন হাত লম্বা প্রতিটি প্লাস্টিক মাদুর পাইকারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে ও নকশা ভেদে খুচরা ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা তৈরিতে খরচ পড়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় পাতির তৈরি মাদুর হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে। ব্যাপক চাহিদার কারণে উপজেলার তিনটি প্লাস্টিক পাইপ তৈরির মিল মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণগুলো সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় আগে আসলে আগে পাবেন এই ভিত্তিতে পাইপগুলো মাদুর তৈরির কাজে জরিতদের কাছে দিচ্ছে। এমনকি পাইপ নিতে মিলমালিকদের কাছে অগ্রীম টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিতে হয়।

প্লাস্টিক মাদুর তৈরির কাজে জড়িত উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের কামাল পারভেজ জানান, আমরা পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই মাদুর তৈরি ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত। গত তিন বছর ধরে আমি প্লাস্টিক মাদুর তৈরি করে বাজারে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি করি। জায়নামাজের মাপে দুই বাই চার ফিট মাদুর আমি বেশি তৈরি করি। আমাদের ত্রিমোহনী হাটে প্লাস্টিক মাদুরের ব্যাপক চাহিদার কারণে আমার ব্যবসা বর্তমানে ভাল হচ্ছে।

নীলফামারি জেলার ডোমার থেকে আসা প্লাস্টিক মাদুরের পাইকারি ক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, আমি প্রায় দুই বছর ধরে এই হাটে এসে প্লাস্টিকের মাদুর পাইকারি দরে কিনে খুলনায় বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যায়। ওখানের এই মাদুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে আমার ব্যবসাও ভাল হয়।

উপজেলার কাশিমপুর ইউপি’র ত্রিমোহনী গ্রামের রবিন জানান, গত তিন বছর আগে প্লাস্টিকের মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ নানা রঙের বাহারি পাইপ তৈরির মিল চালু করি। প্রতি কেজি পাইপ একশত দশ টাকায় খুচরা বিক্রয় করি। শুরুতে ব্যবসা মন্দা গেলেও বর্তমানে প্লাস্টিক মাদুরের চাহিদা বেরে যাওয়ায় আমার ব্যবসা ভাল হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রান্তিক জনপদে এই ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসা আরো প্রসার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই