এখন নতুন প্রজন্মের পালা…
অতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা জামায়াত শিবিরের চাঁদাবাজী ছিলো কেবল-ই রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে। আর এখন এয়ানত আদায়ের নামে জামায়াত-শিবির, খরচের নামে বিএনপি আর লাইনের নামে চাঁদা আদায় করছে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তানসহ বিভিন্নস্থানে নিয়মিতই চাঁদা আদায়ের রাজনীতি করে চলেছে এই তথাকথিত স্বাধীনতা ও ইসলামের ধ্বজাধারীরা। যাদের রাজনীতির মূল পূঁজি হলো- ধর্ম এবং স্বাধীনতা। এই দুই পূঁজির বাইরে বেরিয়ে আসার মত কোন যোগ্যতা এদের নেই বলে একদিকে পেশি শক্তির ব্যবহার বাড়ানো, অন্যদিকে চেতনাকে বিক্রির ধুম পড়েছে।
৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পরের কথা। একদিন আমার ছোট বোনকে আনতে গিয়েছিলাম ভিকারুন নিসা স্কুল থেকে। ছোট বোনকে নিয়ে ফেরার পথে যে দৃশ্য চোখে পরে, সে দৃশ্যটি হলো- এক ষন্ডা প্রকৃতির লোক এসে একজন হকারকে বলে, ১০০ টাকা দে। হকার লোকটি বোধহয় নতুন এসেছিলো ঐ এলাকায়। কিছু না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করেছিলো,‘কিসের ট্যাকা ভাই?’ উত্তরে হকারের মুখে একটা কষে চড় মারলো সেই ষন্ডা লোকটি। অতঃপর আরো চড় মারতে মারতে ষন্ডা বললো, জানিস আমি এই এলাকার আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। তারপর আর কোন কথা না বলে হকারের পকেট থেকে ১০০ টাকা বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় পথ রোধ করি; কি ভাই, কিসের টাকা নিচ্ছেন বললেন না তো। বলতেই রাগে গজগজ করতে করতে বললো, এখন কি তুমারেও উত্তম-মধ্যম দেওন লাগবো? উত্তরে কোন কথা না বলে পাশেই রমনা থানার এক এসআইকে ফোন করি। একটু পরেই তিনি এসে হাজির। কিন্তু আমি এর পরের ঘটনা দেখে তো আরো তাজ্জব হয়ে যাই। কি হলো ঘটনাটা! এসআই এসেই আমাকে বাদ দিয়ে সেই ষন্ডার সাথে সালাম বিনিময় করলো এবং এরপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন ডেকেছেন ভাই? বললাম, যে কারনে ডেকেছি, সেই কারনটা মনে হয় আপনার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবুও তিনি সামাজিকতার খাতিরে আবারো জানতে চাইলে ঘটনাটা বললাম। এসআই উত্তরে বললো, ভাই আপনি কি শুরু করেছেন কলাম লেখেন, রাজনীতি করেন; ওসব বাদ দিয়ে এখন এই লাইনম্যানদের পেছনে লেগেছেন? এসআইকে বললাম, এভাবে বাংলাদেশ একাত্তর পরবর্তী সময়ে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিলো আর এখন আপনাদের মত কুলাঙ্গারদের কারনে ধ্বংশ হতে বসেছে।
কানে খুব বাজছিলো, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই… যে কারনে ভয়কে জয় করার লক্ষ্য থেকে স্কুল ফেরত বোনকে সাথে নিয়েই রমনা থানায় মামলা করতে যাই। মামলা নেয়নি স্বাক্ষির অভাব বলে; তারপর আর কি করা। স্বাক্ষিহীন মামলা না নেয়ায় ফেরত চলে আসতে হয় আমাকে প্রতিবাদের তীব্র যন্ত্রণা থেকে। যে দেশে পুলিশ-প্রশাসন আর রাজনৈতিক দলের তথাকথিত নেতাকর্মীরা এক হয়ে চাঁদাবাজী করে; সে দেশে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে আরো দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এক সময় চাঁদাবাজীর নগরীতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। যা আমার তো নয়ই; যে কোন সভ্য মানুষের পক্ষে কাম্য হতে পারে না। আমাদেরকে গড়তে হবে বাংলাদেশ। এমন বাংলাদেশ; যেখানে চাঁদাবাজী নেই; থাকবে না। যেখানে সন্ত্রাসী নেই; থাকবে না। যেখানে দুর্নীতি নেই; থাকবে না।
পত্রিকার পাতায় আমি-আমরা; আমাদের মত রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্ম আর পড়তে চাই না এমন সংবাদ শিরোনাম ‘কার বসিয়ে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি।’ জানতে চাই না ‘শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে সড়কের ফুটপাতকে বিভিন্ন লাইনে ভাগ করে হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিনই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এদিকে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালায় এই এলাকায়। কিন্তু অভিযান হলেই বেড়ে যায় চাঁদাবাজদের রেট। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ সব ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তুলে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠন আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) নামে প্রতিদিন এ এলাকা থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এদিকে মাহে রমজানকে সামনে রেখে অধিকাংশ ফুটপাতই দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীদের মূল সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ঢাকা ট্রেড সেন্টার (সাবেক বঙ্গ মার্কেট) সংলগ্ন সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে দুইশতাধিক নতুন-পুরাতন জুতার হাট। এ হাটের সুরক্ষায় সরকারি পিলার দিয়ে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সামনের রাস্তা ঘিরে দেয়া হয়েছে। সেখানকার হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দোকানদারকেই অগ্রিম অফেরতযোগ্য ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করে বসাতে হয়েছে দোকান। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের নামে দোকান প্রতি ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা তাদের প্রতিদিন গুনতে হয়। এখানকার নিয়ন্ত্রক জজ মিয়ার মনোনীত লাইনম্যান ভোলা মিয়া তোলেন এ টাকা। সুরিটোলা থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তাটি চলে গেছে স্যানিটারি ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকের দখলে। আর গুলিস্তান থেকে জিপিও মোড় পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠেছে কাপড়, জুতা, ফলসহ বিভিন্ন ব্যবসা। এ কারণে গুলিস্তান-সদরঘাট সড়কে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নবাবপুর থেকে গুলিস্তান সড়কটির দুই পাশে ফ্যান, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেশিনারিজ ব্যবসায়ীদের দখলবাজিতে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। নবাবপুরের বাসিন্দা আব্বাস আলী জানান, রাস্তা দখল করে ব্যবসা করায় কোন গাড়ি এ এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। প্রতিটি দোকানের ভ্যান কন্টিনারের মাল ওঠা নাম হরহামেসা করায় দিনের পুরোটা সময় রাস্তায় থাকে জ্যাম বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে চলতে হয়। বেশ কয়েকটি পিলারে বিদ্যুতের তার প্যাঁচিয়ে তা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট থেকে গোলাপশাহ মাজারে যাওয়ার মোড়টি। ৩ শতাধিক চৌকি বানিয়ে সেখানে ভাড়া দেয়া হয়েছে জামা-কাপড়, জুতা-বেল্ট ছাড়াও অসংখ্য দোকানপাট। এ রাস্তার দু’ধারের ফুটপাত চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা নামধারী বড় মিয়া, উজ্জ্বল ও নাইম।’
এমন সংবাদ নয়; এমন সংবাদ জন্মের পক্ষে নই আমরা। আমরা সেই সংবাদের পক্ষে; যে সংবাদ বয়ে আনবে বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি-শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে নিরন্তর সততার রাস্তা। সেই রাস্তায় আমরা চলবো বলেই চাঁদাবাজী-সন্ত্রাসী আর দুর্নীতিবাজদের বিপক্ষে নেমেছি। এখন আপনার পালা…। এদেরকে প্রতিহত করতে সচেতন হোন, সচেতন করুন। গড়ুন সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ…
লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ (এনডিবি)
মন্তব্য চালু নেই