সুদ-ঘুষ মুক্ত মেহেরপুরের গাংনী!
২৭ মার্চ। মেহেরপুরের গাংনীর আমলি আদালত-২-এ তখন পিনপতন নীরবতা। পুলিশি রিমান্ড সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি শেষে চলছে রায়ের অপেক্ষা। উপস্থিত আইনজীবী, পুলিশ ও আসামি পক্ষের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা।
শুরু হল আদালতের আদেশ ‘আজ হতে আমি গাংনী থানা এলাকাকে সুদ-ঘুষমুক্ত ঘোষণা করলাম। পুলিশ যদি কোনো আসামি বা ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেয় তাহলে উক্ত আসামি বা ব্যক্তির ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি লিপিবদ্ধকরত বিষয়টি আমলে নিয়ে উক্ত পুলিশকে কারাগারে প্রেরণ করব, তাতে তিনি যদি পুলিশ সুপারও হন। এখানে প্রয়োজনে আমি থাকব, না হয় গাংনী থানার পুলিশ থাকবে। রিমান্ড শেষে মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) আসামিকে নিয়ে আমার এজলাসে হাজির হবে, আসামিকে কোনো নির্যাতন করা হয়েছে কিনা বা তার কাছে টাকা-পয়সা দাবি করা হয়েছে কিনা এ সমস্ত বিষয়াদি আমি নিজে আসামির মুখ থেকে জানতে চাইব। প্রয়োজনে রিমান্ডের আসামি থানায় না নিয়ে এজলাসে অথবা পাশের কোনো কক্ষে নিয়ে আইওকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলব।’
৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে উল্লেখিত আদালতের উপরোক্ত আদেশ।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রিমান্ড নেয়া আসামিকে পুনরায় আইওসহ হাজির করা, গাংনী থানা এলাকাকে সুদ ও ঘুষমুক্ত করার ঘোষণা, পুলিশ সুপারকে গ্রেপ্তার করার হুমকি যা চরমভাবে শিষ্টাচার ও এখতিয়ারবহির্ভূত। পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্য আদালতে একজন বিচারকের এমন অশোভন উক্তি যা আইনের দৃষ্টিতে পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাতে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে পুলিশ সদর দফতর।
জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। দুর্নীতি সমাজের একটি ভেজাল। সে হিসেবে তা আমলে নিয়ে আদালত যদি জনস্বার্থে কোনো মন্তব্য করে তাতে কারও বিরক্ত বা বিস্মৃত হওয়ার অবকাশ কোথায়? বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক না করে বরং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠা সকলকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন।
পুলিশ সদর দফতরের পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করছিল। এসব ঘটনায় জড়িত নেতাকর্মীদের আসামি করে জেলার তিন থানায় একাধিক মামলা রজু হয়।
পুলিশের ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মেহেরপুরের গাংনী বাজারের কাথুলী মোড়ের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের নামে গাংনী থানায় একটি মামলা হয়। মামলার নম্বর-১৬। গাংনীর আমলি আদালত-২ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট মতিউর রহমানের আদালতে ২৭ মার্চ মামলাটির শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানিকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান রিমান্ডের যৌক্তিকতা উপস্থাপন করলে আসামি পক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী বারের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করে। রাজনৈতিক কারণে শুধু একের পর এক মামলায় আসামিদের চালান দেয়া হচ্ছে। আইনজীবীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদালত গাংনী থানা এলাকাকে সুদ-ঘুষমুক্ত ঘোষণা সংক্রান্ত উল্লেখিত আদেশ দেন।
মন্তব্য চালু নেই