মীর কাসেমের আপিলের রায় ৮ মার্চ
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ের জন্য আগামী ৮ মার্চ ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
বুধবার বেলা ১২টা ২৬ মিনিটে উভয়পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন। প্রথমে ২ মার্চ দিন ঠিক করলেও পরে তা পরিবর্তন করে ৮ মার্চ নির্ধারণ করা হয়।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মীর কাসেমের পক্ষে চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। এ ছাড়া মীর কাসেমের ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আলামীন উপস্থিত ছিলেন।
পরে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মীর কাসেমের অপরাধ প্রমাণের জন্য কোনো তথ্য প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। আমরা আশা করছি, মীর কাসেম আলী বেকসুর খালাস পাবেন।’
অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘জসিম, টুনটু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়ার অপরাধে ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছেন তা আপিলে তা বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছি।’
আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগে ছয়টি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের রিভিউ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অপরদিকে আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে মোট ১১ কার্যদিবস মীর কাসেমের পক্ষেবিপক্ষে আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল করেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা। আপিলে তার খালাসের পক্ষে ১৮১টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জসিম ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে হত্যার দায়ে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে রায় প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে সাত বছর করে এবং ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অপরদিকে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাসেমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মন্তব্য চালু নেই