সাঈদীর রায়ে দুই বিচারপতির দুই অভিমত!
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার)। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ বেঞ্চের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন একই বেঞ্চের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সাঈদীর মামলার শুনানির জন্য গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চের সদস্য ছিলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। আর বিচারপতি মানিক ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন।
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেখা যায়, সাঈদীকে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলেও জামায়াতের এ নেতাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি মানিক। বিচারপতি মানিক তার রায়ে সাঈদীকে ফাঁসি দেওয়ার পক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন। এছাড়া রায়ে বিচারপতি মানিক তার তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহকর্মী বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রায়েরও তীব্র সমালোচনা করেন।
রায়ে আরো দেখা যায়, ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার ব্যাপারে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার রায়ে এক নিঃশ্বাসে বলেছেন যে, যেই এজাহার সাঈদীর ছেলে আদালতে উপস্থাপন করেছেন, সেটি সন্দেহাতীতভাবে একটি ভুয়া দলিল। তিনি (বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) এও বলেছেন, সরকার এটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ওই দলিলটি ভুয়া।
বিচারপতি মানিক বলেন, একই ডকুমেন্টের ব্যাপারে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এই দুই ধরনের উক্তি সম্পূর্ণ দ্বন্দ মূলক ও স্ব-বিরোধী। আদালত যখন বলেন, দলিলটি ভুয়া, তখন কী করে আবার আদালত বলতে পারেন যে সরকারপক্ষ সেটা ভুয়া বলে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সাঈদীর বিষয়ে প্রদত্ত রায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ইব্রাহিম কুট্টি বিষয়ে আসামিপক্ষ যে ফটোকপি দাখিল করছে সেটা ভুয়া, তা সরকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও ওই দলিলটি আমরা সন্দেহাতিতভাবে ভুয়া বলে মনে করি। তবে রাষ্ট্র এটা ভুয়া প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটা অপরাধেই সে অপরাধী অন্য অপরাধগুলো রাষ্ট্রপক্ষ ভুয়া প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক অপরাধই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার বেনিফিট অব ডাউট সাঈদী পেতে পারে। সবদিক বিবেচনা করে আমরা মনে করি আমৃত্যু কারাদণ্ডই তার জন্য উপযুক্ত।
উল্লেখ্য, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের মধ্যকার অন্তর্দন্দ্বের বিষয়টি এর আগেও কয়েকবার গণমাধ্যমে এসেছে।
মন্তব্য চালু নেই