বেসরকারি স্কুলে এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০শতাংশ আসন
ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর ৪০ শতাংশ আসন সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণের বিধান রেখে নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোন শ্রেণিতে কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এবং কোন ক্ষেত্রে ভর্তি ‘ফি’ কত হবে তাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে এতে।
সোমবার জারি করা এ নীতিমালার ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরী ছাড়াও দেশের সব বেসরকারি স্কুল-কলেজে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
একইভাবে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্যও নীতিমালা জারি করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ‘ক্যাচমেন্ট এলাকার’ শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।
অবশিষ্ট আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে এলাকা কোটা প্রযোজ্য হবে না।
একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই ‘ক্যাচমেন্ট এলাকায়’ থাকলে শিক্ষার্থীরা উভয় প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির আবেদন করতে পারবে।
পরিচালনা পর্যদের সহায়তা নিয়ে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এই ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ নির্ধারণ করতে বলেছে মন্ত্রণালয়।
ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে একাধিক স্কুলের মধ্যে জটিলতা দেখা দিলে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার সমাধান করবেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে কোনো এলাকা যেন বাদ না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
ক্যাচমেন্ট এলাকা নিয়ে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশে ‘কেউ অসন্তুষ্ট হলে’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে তার আদেশই চূড়ান্ত।
“স্কুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির তারিখে শিক্ষার্থী যে এলাকায় বসবাস করবে- সেই এলাকাই তার ক্যাচমেন্ট এরিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে,” বলা হয়েছে নীতিমালায়।
এতে বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণিতে অবশ্যই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ছাড়াও অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
নির্বাচিত শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে ওই তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আর দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শূন্য আসনে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে। নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে।
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিশুর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। এই বয়স যাচাইয়ে ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে বলেছে সরকার।
শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে পরিচালনা পর্যদ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করবে। তবে একই ক্যাচমেন্ট এলাকার ভর্তি পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন তারিখে নিতে ঢাকা মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্ধারণ করে দেবেন।
ভর্তির জন্য ঢাকা মহানগরসহ এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিও বহির্ভূত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন ফরমের দাম হবে সর্বোচ্চ দুইশ টাকা।
মফস্বল এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সেশন ফিসহ সর্বোচ্চ ভর্তি ফি হবে ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
আর ঢাকা মহানগরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকা, আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।
একই প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে ভর্তিতে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া গেলেও সেশনচার্জ নেওয়া যাবে না।
ভর্তি ফরম এবং ভর্তি ফি বাবদ সরকার নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে এমপিও বাতিলসহ আইননুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নীতিমালায় বলা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনীদের জন্য যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখতে হবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে দুই শতাংশ কোটা।
লিল্লাহ বোডিংয়ের সব শিশুকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে ভর্তি করাতে হবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে তাদের জন্য শূন্য আসনের এক শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তিতে ঢাকা মহানগর এলাকার প্রতিষ্ঠানে দুই শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহোদর/সহোদরা বা যমজ ভাই/বোন যদি আগে থেকেই পড়ে, তাদের আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে ভর্তিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে এই সুবিধা কোনো দম্পতির সর্বোচ্চ দুই সন্তারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারী এবং এর পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের সন্তানদের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির দেওয়া হলেও কোনো কোটা পাবে না তারা।
ঢাকা মহানগরী, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে তিনটি আলাদা কমিটিও গঠন করে দিয়েছে সরকার।
মন্তব্য চালু নেই