৮৯ বছর বয়সে চাকরি চেয়ে বিজ্ঞাপন, অতঃপর
জো বার্টলী নামে ৮৯ বছর বয়সী এক লোক তার বুড়ো বয়সের একাকীত্ব ও বিষণ্নতা কাটাতে চাকরির বিজ্ঞাপন দিলেন। ইংল্যান্ডের সাউথ ডেভন এর বাসিন্দা স্থানীয় একটি পত্রিকাতে সেই বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলেন। তারপর তার জীবনে যেন ‘বিকেলে ভোরের আলো’ চলে আসলো!
বিজ্ঞাপনটির ভাষা ছিল এমন:
‘৮৯ বছর বয়সী একজন সিনিয়র সিটিজেন। পেইনটন এলাকায় কাজ করতে চাই। প্রতি সপ্তাহে ২০+ ঘন্টা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাগানের কাজ, বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ করতে পারি। আমার রেফারেন্স আছে। পুরনো সেনা, বিমানের প্যারাট্রুপার ছিলাম। বিষণ্নতা থেকে আমাকে বাঁচান!’
বিজ্ঞাপনটি দেওয়ার পর বেশি কিছু আশা করছিলেন না। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি তাকে এমন খ্যাতি এনে দিয়েছে তার বাসার ক্লিনার পরদিন এসে অটোগ্রাফ নিয়েছে। সরকারের বিশেষ ভাতায় বাড়িটি পেয়েছিল সেই বয়স্ক ব্রিটিশ ভদ্রলোক। বাসাটি প্রতি সপ্তাহে একদিন এসে দেখভাল করে যেতো ওই ক্লিনার।
গত ১৬ নভেম্বর স্থানীয় পত্রিকা হেরাল্ড এক্সপ্রেস এ সেই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে এমন অবস্থা হয় ইউরোপের অন্য প্রান্ত সুইডেন থেকে সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করে। আর তখন থেকেই তার টেলিফোনে কলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
সিএনএন এর সাথে একটি টেলিফোন সাক্ষাতকারে ৮৯ বছর বয়সী জো বার্টলী বলেন, ‘আমি সত্যিই হতবাক। আমি যখন বিজ্ঞাপনটি দেই তখন ভেবেছিলাম-৮৯ বছর বয়সী লোকের চাকরির বিজ্ঞাপন কে আর দেখবে?’
কেন সে চাকরি করতে আগ্রহী হলো সেটা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি সরকারের আবাসন সুবিধা পেয়ে আসছি। সেটা বেশ ভালো। কিন্তু আমি নিজে অর্থ কামাতে চাই যাতে নিজের ভাড়া নিজে দিতে পারি। আমার খরচ আমি বহন করতে পারলে আমাকে সক্ষম পুরুষ মনে হতো।’
বিমানবাহিনীর সাবেক এই সদস্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিনে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ষ্ঠ এয়ারবোর্ন ডিভিশনে একজন ওয়ারলেস অপারেটর হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
অবসর নেওয়ার পর তার স্ত্রী ক্যাসান্দ্রার সাথে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের কোন সন্তান-সন্ততি নাই। দুবছর আগে স্ত্রী মারা যান। তারপর থেকে আরও একা হয়ে যান। এই একাকী জীবনকে তার কাছে ‘নির্জন কারাবাস’ বলে মনে হচ্ছিল। কারো সাথে কথা বলার কোন সুযোগ ছিলনা।
মিডিয়াতে তাকে নিয়ে প্রচারণার কারণে অনেক পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পাচ্ছেন। তার মতো বুড়োদের জন্য পরামর্শও দিচ্ছেন-‘একা একা বসে থেকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ো না। কিছু একটা করো।’
শেষ খবরে জানা যায় জো বার্টলী অসংখ্য চাকরির অফার পাচ্ছেন। তবে তিনি ক্যানটিনা নামে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেছেন। চাকরির প্রথম দিন সহকর্মী ও কাস্টমারদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন। ক্যানটিনাতে প্রবেশ করার পরপরই কাস্টমার ও সহকর্মীরা তালি মেরে স্বাগতম জানান।
নতুন কর্মস্থলের ঠিকানায় তার নামে প্রচুর চিঠি আসছে। ক্যানটিনার সহ-মালিক ক্যাট অ্যালেন তাদের নতুন সদস্যের হাতে অনেকগুলো চিঠি হস্তান্তর করেন।
ক্যানটিনার ভেতর বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে ৮৯ বছর বয়সী জো বার্টলী।
সূত্র: সিএনএন, হেরাল্ড এক্সপ্রেস
মন্তব্য চালু নেই