ফুলশয্যার আগের রাতে বরের গলায় কনের কোপ

পরদিনই বিয়ে হওয়ার কথা। নতুন জীবনের নানা স্বপ্নে বিভোর বর! রাত পোহালেই শুরু হবে জীবনের নতুন ইনিংস। আর সেই মুহূর্তেই ফোন হবু বৌয়ের। বলল, ‘কথা আছে’! সেই আহ্বানেই অগ্রপশ্চাত বিবেচনা না করে ছুটে যান বর চিরঞ্জিত। সাক্ষাতের পর বৌয়ের আবার আজব আবদার। ‘কানামাছি’ খেলতে হবে। অদ্ভূত ঠেকলেও হবু বৌয়ের আবদার ফেলতে পারেননি যুবক। তাই প্রস্তাবে রাজি হলে হবু বরের চোখ বেঁধে দেন কনে। আর এরপরই ঘটে ভয়াবহ ঘটনাটি!

গলায় যে ঠাণ্ডা জিনিসটা ঠেকে, সেটা কোনো কোমল স্পর্শ নয়, ধারালো কাটারির ফলা। কোনো মতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া চিরঞ্জিত পরে জানান, চোখ থেকে রুমাল নামিয়ে তিনি দেখেন গলায় কাটারি ধরে রেখেছে হবু কনের বান্ধবী নাসিমা খাতুন। অগ্নিমূর্তি হয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে হবু বৌ দীপা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফের আক্রমণ করে বসে দু’বান্ধবী। কোনোমতে তা সামলে আক্রমণকারীদের আগে নিরস্ত্র করেন তিনি। পাশাপাশি চলছিল তার চিৎকার। ডাকে সারা দিয়ে আশপাশের লোক জড়ো হতেই তাদের হাতে হবু বৌ আর তার বান্ধবীকে সোপর্দ করেন চিরঞ্জিত। আর গলায় ক্ষত নিয়েই ছোটেন স্থানীয় থানায়।

ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার সদরে, সোমবার রাতে। জানা যায়, আহত চিরঞ্জিত ওই অবস্থাতেই মোটরসাইকেল চালিয়ে থানায় পৌঁছান চিরঞ্জিত। অভিযোগ দায়ের করেন রক্তাক্ত অবস্থাতেই। ফলে আটকও হয় দীপা আর নাসিমা। মঙ্গলবার তাদের আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

কাটারি’টি উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই বান্ধবীর এমন কাণ্ডের পেছনে দুটি বিষয়কে সন্দেহ করছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তারা জানান, প্রথমত দীপা ও নাসিমার ‘ঘনিষ্ঠতা’কে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। কেননা, তাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দুই পরিবারের ভেতরেও অস্বস্তি ছিল। এছাড়া চিরঞ্জিতের অভিযোগ, দীপাকে খারাপ পথে নামানোর চেষ্টা করছিল নাসিমা। বিয়ে হলে তার সেই চেষ্টা সফল হতো না। তাই দীপাকে বুঝিয়ে চিরঞ্জিতকে খুনের চেষ্টা করে নাসিমা।

অবশ্য মুখ না খুললেও তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে বলেই জানিয়েছেন বর্ধমানের এসপি কুণাল অগ্রবাল। জানিয়েছেন দুই তরুণী সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে এসেছে। তবে নিশ্চিত না হয়ে এখনই কিছু জানানো যাচ্ছে না।

দীপার বাড়ি কালনার নিউ মধুবন এলাকায়। পাশেই বাস বান্ধবী নাসিমার। দু’জনের বয়সই বিশ থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে। প্রতিবেশীরা জানান, ছোটবেলা থেকেই দুই বান্ধবীর ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়ার মতো। এক সঙ্গে খাওয়া, ঘোরাফেরা। তবে বছর পাঁচেক আগে এলাকার মুদি দোকানদার চিরঞ্জিতের সঙ্গে দীপার সম্পর্ক হলে দুই বান্ধবীর ঘনিষ্ঠতায় টান পড়ে।

কালনারই শাসপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিত মাস তিনেক আগে দীপাকে বিয়ে করলেও তা মেনে নেননি দুজনের পরিবার। বরং দুই পরিবার ঠিক করে, সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দেয়া হবে। আর সেটি হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার।

জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে নাসিমাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছে দীপা। বলেছে, চিরঞ্জিতকে আঘাতের সময় নাসিমার হাতে নয়, কাটারি ছিল তার হাতে। দীপার দাবি, সাক্ষাতের সময় চিরঞ্জিত সঙ্গে আপেল এনেছিলো। আর তা কাটতেই দীপা বাড়ি থেকে কাটারি নিয়ে আসে। এসময় ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হঠাৎ পা পিছলে কাটারির উপরে পড়ে যায় চিরঞ্জিত।

আর আদালতে বান্ধবী নাসিমার দাবি, রাতে ঝগড়ার আওয়াজ পেয়ে মাঠে যায় সে। অথচ তাকেই কিনা খুনের দায়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে!

এদিকে এমন অভিজ্ঞতার পর বিয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে চিরঞ্জিতের। বর্তমানে ফুলশয্যা ছেড়ে কালনা হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছেন চিরঞ্জিত। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কাটারির আঘাতে গলায় সেলাই পড়েছে গুনে গুনে ১১টি। হাতেও আঘাত রয়েছে। আর হামলার কথা উঠলেই বদলে যাচ্ছে চিরঞ্জিতের চেহারা। বলছেন, ‘গত ৫ বছরে খুব কাছ থেকে দেখেছি দীপাকে। তবে কাটারির আঘাতে বুঝলাম চোখ বুজে ভরসা করাটা আসলে বুদ্ধিমানের কাজ নয়!’

সূত্র : আনন্দবাজার



মন্তব্য চালু নেই