৮৪ হিট লিস্টের ৮ জনকে হত্যা

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগে মুক্তচিন্তার লেখক ও ব্লগারসহ নতুন প্রজন্মের তরুণরা গণজোয়ার গড়ে তোলে। সেই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে প্রথম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি সংগঠন ‘হিট লিস্ট’ নামে ৮৪ জন ব্লগারসহ আন্দোলনকারীদের তালিকা প্রকাশ করে।

তালিকায় নাম প্রকাশের বিষয়ে বলা হয়েছিল ‘এরা সবাই ইসলামের দুশমন।’ ব্লগার এবং আন্দোলনকারীদের নাস্তিক উপাধি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল, এরা ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) কটূক্তি করে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী একে একে ব্লগারদের হত্যা করা হবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হুমকিও প্রদান করা হয়।

আন্দোলনকারীরা ওই সময় নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে অতি সতর্ক না থাকায় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আততায়ীদের হাতে খুন হন ৬ জন ব্লগার। সরকারের তরফ থেকেও ব্লগারদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।

৮৪ জনের তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিৎ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন, মারুফ রসুল, আরিফ জেবতিক, ইব্রাহীম খলিল, আরিফুর রহমান, অনন্য আজাদ, মাহামুদুল হক মুন্সি বাঁধনের নাম শীর্ষে ছিল। শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব হায়দার শোভন এবং গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়।

৮৪ জনের তালিকার মধ্যে ২০১৩ সালে প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারি জাফর মুন্সি, ২৮ ফেব্রুয়ারি মামুন হোসেন এবং ২ মার্চ জগৎ জ্যোতী তালুকদারকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া একই বছরের বিভিন্ন সময়ে আরিফ হোসেন দীপ এবং জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবু নামে আরো দুজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়। এতে হিট লিস্টের ৮৪ জনের মধ্যে ৮ জন ব্লগারকে হত্যা করতে সক্ষম হয় আততায়ীরা।

পুলিশ, চিকিৎসক এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য থেকে জানা গেছে, হত্যাকারীরা ব্লগারদের একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া প্রায় প্রত্যেককে অন্ধকারে পেছন থেকে আক্রমণ করে হত্যার কাজ সম্পন্ন করা হয়। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মুক্তমনা এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কেও একইভাবে হত্যা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের ঘাড়ের ওপর জগদ্দলের মতো চেপে বসেছে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা দিতে উদাসীন। ওয়াশিকুরসহ এখন পর্যন্ত ৮ জনকে হত্যা করেছে ধর্মান্ধরা। পূর্বের ৭ ব্লগার হত্যার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। কাউকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে হত্যাকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে আরো বেশি শক্তি অর্জন করছে।’

ইমরান এইচ সরকার আরো বলেন, ‘এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অভিজিৎ রায়ের হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। একজনকে ধরলেও তার কাছ থেকে কোনো কিছু বের করা সম্ভব হয়নি। বরাবরের মতো এবারও আমরা এ হত্যা নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করব। দেখা যাক কি হয়।’

সূত্র-অনলাইন



মন্তব্য চালু নেই