‘৭১ এর বীরসেনা আতিয়ার এখন ভ্যান চালক

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে লাঙল জোয়াল ফেলে যারা যুদ্ধে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আতিয়ার রহমান একজন। যে স্বপ্ন নিয়ে ‘৭১ এর রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি তার। মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ী সেই যোদ্ধা এখন জীবন যুদ্ধে পরাজিত। রোগে-শোকে অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। দেশ স্বাধীন করতে যে একদিন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধাই বেঁচে থাকার তাগিদে এখন ভ্যান চালাচ্ছেন।

১৯৭১ সালে ২০ বছরের তরুণ ছিলেন আতিয়ার। টগবগে এক যুবক। তার বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ী ইউনিয়নের নেবাখালি গ্রামে। ৫ ভাই আর দুই বোনের মধ্যে আতিয়ার রহমান সবার বড়। সংসারে অভাব থাকায় লেখাপড়া শেখা হয়নি। একাত্তরে যুদ্ধের সময় কাকডাংগা সীমান্তের বিপরীতে ভারতের হাকিমপুর যান আতিয়ার রহমান। প্রশিক্ষণ নিয়ে ভোমরা সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। লক্ষ্মীদাড়ী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর বাগেরহাটের মংলায় যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

আতিয়ার রহমান বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের জন্য সেদিন জীবনের মায়া ত্যাগ করেছিলাম। একটি পতাকার জন্য লাঙল ফেলে হাতে নিয়েছিলাম অস্ত্র। তখন আমার বয়স ছিলো ২০ বছর। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর আগে। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা সেদিন যুদ্ধ করেছিলাম তা আজও পূর্ণ হয়নি। আমাদের স্বপ্ন ছিলো ক্ষুধা, দরিদ্র্য, সন্ত্রাসমুক্ত একটি সোনার বাংলার। যে বাংলায় হিন্দু- মুসলিম সবাই সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। হিংসা- হানাহানি মুক্ত একটি শান্তিময় দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।’

আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সে স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। আজও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হয়। শুধু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা দিলে আমাদের ভাতা আরও বেশি হতো।’

আতিয়ার রহমানের তিন ছেলে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সাত কাঠা জমি ভাগ-বাটোয়ারা করে পেয়েছেন এক কাঠা। সেখানেই থাকেন তিনি। অভাবের কারণে তিন ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। ছেলেরা মাঠে কৃষি কাজ করে। তাদের আলাদা সংসার। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান ঠিকই কিন্তু তাতে সংসার চলে না। তাই সংসার চালাতে ৬৫ বছর বয়সে তাকে ভ্যান চালাতে হয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন ৮০০০ টাকা ভাতা পাই। এ বাজারে নুন আনতে পানতা ফুরায়। এরপর ডাক্তার খরচ।’

মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার জানান, ‘অর্থের অভাবে ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে পারিনি। ওরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কি জানে?’

তিনি বলেন, এ দেশের মাটিতে থাকা সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না। এত বছর পর হলেও যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী শাস্তি পেয়েছে তাতে আমি খুশি। এদের শাস্তি আরও আগে দরকার ছিলো। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করে যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।



মন্তব্য চালু নেই