৬ বছরেও শেষ হয়নি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচার কাজ ছয় বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
নিম্ন আদালতে এ ঘটনায় দণ্ডবিধির আওতায় বিচার করার পর ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিল শুনানির জন্য বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে মামলা।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। এই বিশেষ বেঞ্চে শুধুমাত্র পিলখানা মামলার আপিলের শুনানি করা হচ্ছে।
সুপ্রীমকোর্টের তত্ত্বাবধানে পেপারবুক প্রস্তুত করে দ্রুত আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানি একসাথে চলছে।
এ মামলার আপিল শুনানির জন্য বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ গত ১৭ জানুয়ারি গঠন করে ১৮ জানুয়ারি থেকে প্রায় বিরতিহীনভাবে শুনানি করছে।
ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য সর্বমোট ৩৫ হাজার ১শত ১৩ পৃষ্ঠার পেপার বুক প্রস্তুত করা হয়েছে।
আদালতে সম্পূর্ণ পেপার বুক পড়া হবে, তারপর উভয়পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে হাইকোর্ট এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করবে।
হাইকোর্টে এ পর্যন্ত ২১ কার্যদিবস শুনানি হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের ৬৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দির মধ্যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি আদালতে পাঠ করা শেষ হয়েছে।
‘আর কতদিন লাগবে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত খুনীদের দণ্ড কার্যকর করতে’ এমন প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল শুনানির কার্যক্রম যে গতিতে এগুচ্ছে আশা করছি ৬ মাসের মধ্যে শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমার অনুমান। তবে সব নির্ভর করে বিচারপতিদের উপর।’
মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর এটা আবার আপিল বিভাগে যাবে। তারপর আপিল বিভাগ বিস্তারিত শুনবে। সেক্ষেত্রে রায় কার্যকর করতে কত দিন লাগবে, সেটা বলা কঠিন।
‘তবে হাইকোর্টের চাইতেও আপিল বিভাগে কম সময় লাগবে’- আশা করেন এ্যাটর্নি জেনারেল।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যেই মামলার চার্জশিট, জব্দ তালিকা এবং ৫৩৮ জন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে পাঠ করে শোনানো হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালত প্রতিটি সাক্ষীর সাক্ষ্য চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। আশা করি ন্যায় বিচার পাব।
আসামিপক্ষের অপর আইনজীবী এ্যাডভোকেট শামীম সরদার বলেন, মামলার কার্যক্রম শেষ করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে। কারণ মামলার নথিপত্র অনেক বেশি।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে মহানগর তৃতীয় দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ১১৯টি ফৌজদারি আপিল, ১৪১টি জেল আপিল ও ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য একটি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে।
খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৬৫৪ জন ও আসামিদের পক্ষে ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে ৫৩৮ জন তাদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পেশ করেছেন।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা অফিসার, ৯ জন বিডিআর, ৭ জন সাধারণ মানুষ ও ১ জন সেনা সদস্য নিহত হন। দ্য রিপোর্ট
https://www.youtube.com/watch?v=MkPwhMIV0Wk
মন্তব্য চালু নেই