৫ জানুয়ারি ঘিরে ৪৩৪ মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১০ দিনে ৭০৪টি মামলা হয়েছিল। কিন্তু ওই ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ৪৩৪টি মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। যেসব মামলা তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বিচারও সম্পন্ন হয়নি। বছর ঘুরে আবারও ৫ জানুয়ারি এসেছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তাধীন মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আর যেসব মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় ক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার নেই।খবর বাংলা ট্রিবউিনের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে এগুলো তদারক করছি আমরা। যেসব মামলার তদন্ত বাকি রয়েছে,সেগুলো দ্রুত তদন্ত করার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’
দশম জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ শুরু হয় ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকা হয়। সে সময়ে সারা দেশে চলতে থাকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আন্দোলনকারীদের হাতে যেমন সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতেও মারা গেছে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন বছরেও এসব মামলার বিচার শেষ হয়নি। এমনকি বেশিরভাগ মামলার তদন্ত থমকে আছে।
পুলিশ সদর দফতরে খোঁজ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার বিষয়ে মামলার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা যায়, বছরজুড়ে যেসব মামলা হয় পুলিশ সেসব পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে। তবে পুলিশ সদর দফতরের সংশিষ্ট একটি সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ৭০৪টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রংপুর রেঞ্জে। ১০দিনে রংপুর রেঞ্জে ৩৪৬টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এছাড়া ঢাকা রেঞ্জে ৪৫টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১০৩টি, রাজশাহী রেঞ্জে ১০২টি, খুলনা রেঞ্জে ৩৬টি, বরিশাল রেঞ্জে ১৫টি, সিলেট রেঞ্জে ১৭টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে মামলা হয়েছে ৪টি।
এছাড়া এই ১০ দিনে ডিএমপিতে ১২টি, সিএমপিতে ১০টি, কেএমপিতে ১টি, আরএমপিতে ৬টি, বিএমপিতে ৫টি ও এসএমপিতে ২টি মামলা দায়ের হয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, ৭০৪টি মামলার মধ্যে এখনও ৪৩৪টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। পাঁচটি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর চার্জশিট আদালতে দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় লক্ষাধিক লোককে আসামি করা হয়েছিল।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ওই দশ দিনে সারা দেশে ২৫ জন নিহত ও ৩৯০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ২৫ জনের মধ্যে ৯ জন পুলিশ ও বাকি ১৬ জন সাধারণ নাগরিক। আহত ৩৯০ জনের মধ্যে ১৮৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত সারা দেশে ১৪১ জন নিহত হয়েছেন। এমনকি দশম নির্বাচনের এক বছর পূর্তির সময় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করেও সারা দেশে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের পুরো বছরে সহিংসতা ঘিরে ৮০৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ৬৯৭টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ৫৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আর ৫৮টি মামলা এখনও তদন্তাধীন পর্যায়ে রয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, এসব মামলার বেশিরভাগই দায়ের হয়েছিল বছরের শেষের দিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকে কেন্দ্র করে।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার গুলশান ও যাত্রাবাড়ীর পৃথক চারটি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার দায়ের হওয়া মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়াকে আসামি করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুটি ও খুলনা সদরে একটি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য চালু নেই