৪ হাজার ডলারে মুক্তি পেয়েছিলেন ওয়াসফিয়া!

গ্রানাইট পাথরের সুউচ্চ পর্বত, প্রতি পদক্ষেপে মৃত্যুভয়, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ‘হিংস্র’ জাতিগোষ্ঠীর ধরে নিয়ে যাওয়া আর চার হাজার ডলারের বিনিমেয় ছাড়- সব মিলিয়ে ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কার্সটেসন পিরামিড পর্বতশৃঙ্গ জয় করলেন পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরিন। সেখান থেকে যে তিনি ফিরে আসতে পারবেন সে কথা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের এই পর্বতারোহী।

ওয়াসফিয়ার মতে হিমালয়ের চেয়েও জটিল ও কঠিন এই কার্সটেসন পিরামিড পর্বত শৃঙ্গ জয় করা। তিনি বলেন, ‘পুরো পাহাড়টি গ্রানাইট পাথরের। একটি চূড়া থেকে অন্য চূড়ায় যেতে হয় দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে।’

2015_11_26_14_02_48_FUTiDSi205zxcxkbWNM5h5ZEN9WF16_original

ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত মাউন্ট কার্সটেনস নামের পর্বতের শৃঙ্গটি পুঞ্জাক জায়া নামেও পরিচিত, যার উচ্চতা ৪৮৮৪ মিটার। ওয়াসফিয়া বলেন , ‘বিশ্বাস করেন, আর না-ই করেন, কার্সটেসন পিরামিড আমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন ও দুর্গম পাহাড়। এভারেস্টের চেয়েও।’

এই পর্বতের চূড়ায় উঠতে গিয়ে পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন ওয়াসফিয়া। পাহাড়ের বেসক্যাম্পে পৌঁছাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা হয় তার। যাদের মধ্যে নানা ধরনের কুসংস্কার ও হিংস্রতা রয়েছে।

পর্বত আরোহণ শেষ করে ওয়াসফিয়া যখন ফিরছিলেন তখন একটি গ্রামে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি মারা যায়। সেজন্য দায়ী করা হয় ওয়াসফিয়া ও তার সহযোগিদের! কারণ সেই গ্রামের লোকজন বিশ্বাস করে বিদেশিদের আগমনের কারণেই সেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে! এমন কুসংস্কার প্রচলিত আছে পর্বতের পাদদেশের গ্রামগুলোতে। সেজন্য তাদের ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে।

2015_11_26_14_03_43_pKehJfUTSm8COw3uktiRTO0toOEYsr_original

ওয়াসফিয়া বলেন, ‘এরপর আমাদের ধরে নিয়ে যায়। তারপর চার ঘণ্টা সালিশ হয়। শেষ পর্যন্ত ওদের চার হাজার ডলার দিয়ে আমরা সেখান থেকে আসি।’

তিন বছর ধরে সেই পর্বতে ওঠার চেষ্টা করেছেন ওয়াসফিয়া। কিন্তু অনেক দূর্গম পাহাড় হওয়ার কারণে এর আগে তার কয়েকটি চেষ্টা বিফল হয়। তিনি বলেন, ‘গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে এবং ২২০ কিলোমিটার পথ হেঁটে কার্সটেসন পিরামিড পর্বতের বেসক্যাম্পে যেতে হয়।

পর্বতের এক দিকে সোনার খনি থাকায় সেখানে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ান মাফিয়াদের আনাগোনা। অন্যদিকে স্থানীয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তির-ধনুকের মারামারি।

2015_11_26_14_05_00_tHpJAzbHfEdzdPbAkYeH9aUWdKOEx2_original

ওয়াসফিয়া বলেন, ‘নিরাপদে পৌঁছাতে পারব কি না সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। সামিটের দিন আমি বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলাম। হিমালয়ে ওঠার সময় শেরপারা রাস্তা বানিয়ে দেয়। আপনি দড়ি ধরে ধরে উঠবেন। এখানে ওরকম কিছু নেই। সবকিছু নিজের করতে হয়।’

কিন্তু তারপরও পেরেছেন ওয়াসফিয়া। কথা দিয়েছিলেন বিশ্বের সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেবেন। চার বছর আগে তিনি তার এই কর্মসূচি শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেটির বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশের এই পর্বতারোহী। সূত্র : বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই