৪০ কোটি টাকার জমির বিনিময়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় হেফাজত

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ৪০ কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি লিজ পাচ্ছে। যদিও এই জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক। আজ অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডি.কম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবশেষে সরকারের সঙ্গে অলিখিত ও অঘোষিত শর্তে সমঝোতায় পৌঁছেছে হেফাজতে ইসলাম।

আর সমঝোতার একটি বড় অংশ হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসা ৪০ কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি পাচ্ছে। এই মাদ্রাসাটি হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী পরিচালনা করেন।

প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয় যে, এই জমি প্রাপ্তির ফলে হেফাজত নেতারা বর্তমান সরকারের কোনো কাজের বিরোধিতা করবেন না। সরকার বিরুদ্ধ অবস্থান পরির্বতন করবেন। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনে যাবে না দলটি। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে দেশব্যাপী যে মামলা হয়েছে, তাতেও ছাড় দেবে সরকার।

যদিও এই জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক। তিনি পোর্টালটিকে বলেন, এই জায়গা মাদ্রাসার দখলেই আছে। অনেক আগেই মাদ্রাসার পাওয়া কথা ছিল। জায়গার বদলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার সংবাদটি টিক নয়। তিনি দাবি করেন, তারা আন্দোলনের কৌশল বদল করছেন মাত্র।

মাওলানা আজিজুল হক আরও বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার নামে রেলওয়ের কিছু জমি লিজ বরাদ্দ হচ্ছে। এই জমি অনেক আগে থেকেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দখলে আছে। এর সঙ্গে সমঝোতার কিছু নেই। মাদ্রাসার জমির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বা শাহ আহমদ শফীরও কোনো সম্পর্ক নেই। একটি মহল হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা নানাভাবে হেফাজতে ইসলামের বদনাম করছে। এটি তারই অংশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাস্তবতার কারণে হেফাজত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে গেছে। গত বছরের ৫ মের ঘটনার ব্যাপারে হেফাজত এখন গভীরভাবে অনুতপ্ত। তারা যদি তাদের ভুল শুধরে নিয়ে চলতে চায়, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজতের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি শানে রেসালত নামে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের আগেই গোপনে সরকারের সঙ্গে চলমান বিরোধ মিটিয়ে ফেলে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে হেফাজত। তারা এখন শুধু গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। আর এই সমঝোতার অংশ হিসেবে গণজাগরণ মঞ্চের ওপর থেকে সরকার সমর্থন তুলে নেবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সম্প্রতি (১১-১২ এপ্রিল) লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত শানে রেসালত সম্মেলনে হেফাজতের আমিরের দেওয়া বক্তব্যে এই সমঝোতার প্রতিফলন স্পষ্ট হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক শাহ আহমদ শফী রেসালত সম্মেলনে বলেছেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আমাদের বন্ধু। আসুন, আমরা সবাই ভালো হয়ে যাই। সবাই মিলে সুন্দর সোনার বাংলা গড়ে তুলি।’

প্রতিবেদনে প্রকাশ যে, হাটহাজারী মাদ্রাসাসংলগ্ন রেলওয়ের প্রায় তিন একর জমি তিন শতাধিক খুঁটি গেড়ে দখলে নিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সেখানে বড় বড় সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে, ‘লিজ সূত্রে এই জমির দখলদার ও মালিক হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ’।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

আরও জানা যায়, কয়েক মাস আগে জমিগুলো লিজ নেওয়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। সরকারের সঙ্গে বিশেষ সমঝোতার আলোকেই তিনি জমি লিজের আবেদন করেন বলে সূত্রগুলো জানায়। লিজের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

এদিকে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার বিষয়টি এখন চট্টগ্রামে টক অব দ্য সিটি হয়ে উঠেছে।



মন্তব্য চালু নেই