২ নভেম্বর রাজধানীতে দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা

ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম আগামী ২ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় সব ধরনের দোকানপাট সকাল-সন্ধ্যা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে । জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হয়রানি বন্ধ ও বর্ধিত প্যাকেজ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব এ ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সভাপতি হাজী আবদুস সালাম, এফবিসিসিআই’র পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসানসহ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নেতারা

আর আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), এনবিআর এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

মোতালেব বলেন, এতোদিন রুটি-বিস্কুট, হাওয়াই চপ্পল কর অব্যাহতি সুবিধা পেতো। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রতি কেজি ১০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের পাউরুটি, বনরুটি, হাতে তৈরি কেক, বিস্কুট এবং ১২০ টাকা পর্যন্ত রাবারের হাওয়াই চপ্পল, প্লাস্টিকের পাদুকার ওপর কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ও মাঝারি শিল্প ব্যবসাখাতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান এবং এনবিআর’র কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধের জন্য এফবিসিসিআই’র মাধ্যমে একাধিবার এনবিআরের সঙ্গে বসা হয়েছে।

তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে তারা আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এনবিআর হয়রানি করছেই। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই এনবিআর’র কর্মকর্তারা এসে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে। ফাইল, খাতাপত্র নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কারণে আজ দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাড়তি কর চাপানোয় দেশিয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ভারতীয় ও চীনের সস্তা পণ্যের প্রভাবে আমরা টিকতে পারছি না। কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য দেশিয় শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে।’

মোতাবেল বলেন, জাতীয় স্বার্থে আমরা ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া ও এনবিআর কর্মকর্তাদের অযৌক্তিক হয়রানির প্রতিবাদে এবং প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের উদ্যোগে আগামী ৩০ অক্টোবর বিকাল ৩টায় এফবিসিসিআই প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সভা করবো। আর ২ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীর সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করা হবে। ওইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন পণ্য বিক্রি করা হবে না। তবে আমরা রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর বা এ ধরনের কোন কর্মসূচি পালন করবো না’ বলেন মোতালেব।

ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের এই নেতা বলেন, এফবিসিসিআই আমাদের মাদার প্রতিষ্ঠান। আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে এফবিসিসিআই আমাদের দাবি আদায় করে দিতে না পারলে প্রথমে এফবিসিসিআই কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। তারপর এনবিআর’র কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও আমরা ঘেরাও করবো।

সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক ও কর আইনের প্রয়োগ ও প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’র পক্ষ থেকে ৪টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- এক. এনবিআর এর সেবামূলক কার্যক্রমগুলো এনবিআর, এফবিসিসিআই, সংশ্লিষ্ট খাতভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন ও চেম্বারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বা পার্টানারশিপের ভিত্তিতে করতে হবে।

দুই. এনবিআর, এফবিসিসিআই এবং সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশন ও চেম্বারের যৌথ উদ্যোগে দেশের সকল উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং বিষয় সম্পত্তির অধিকারী নাগরিকদের শুল্ক ও কর নেটওয়ার্ক আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিন. কর প্রশাসন ও করদাতা উভয়পক্ষকেই রাজস্ব আদায় ও পরিশোধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর বিষয়ক আইন নীতিমালা ও বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ এবং প্রতিপালন নিশ্চিত করা।

চার. কর প্রশাসন ও করদাতা উভয়ের সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইস্যুভিত্তিক মাসিক সেমিনার বা আলোচনাসভা আয়োজন করা।

আবু মোতালেব জানান, এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এনবিআর’র চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এনবিআর’র সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এফবিসিসিআই সভাপতির নেতৃত্বে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দেখা করেছি। প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক সাড়া পাইনি।



মন্তব্য চালু নেই