২০৩০ সালে বিদ্যুতে বায়ুদূষণ ৩ গুণ বাড়বে
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণের হার। ২০৩০ সালে বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি বায়ু দূষণ ঘটাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির বহুমাত্রিকতার মাধ্যমে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। একই সঙ্গে বেড়ে যাবে বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকর কার্বন-ডাইঅক্সাইড (গ্রিন হাইজ গ্যাস) গ্যাসের নির্গমনের মাত্রাও।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরাকরি উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড এর গবেষণা মতে, এ সময় বছরে ১২৫ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নি:সরণ করবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বছরে ৩৭ মিলিয়ন টন কার্বনডাই অক্সাইড নির্গত হয় ।
ইউএস এইডের প্রতিবেদনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন কমানোর কথা বলা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বায়োমাসকে সহযোগী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন হ্রাস পাবে। তাদের হিসেব মতে, এ পদ্ধতির কারণে ২০৩০ সালে কার্বন নির্গমন ১২৫ মিলিয়ন টন থেকে ৮৮ মিলিয়ন টনে নেমে আসবে।
তবে প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, জ্বালানির এ বহুমাত্রিকতার ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ সালে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৪০ টাকা। আর জ্বালানির বহুমাত্রিকতায় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৬০ টাকা।
বায়োমাস ছাড়াও তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), বিদ্যুৎ আমাদনির মাধ্যমেও এ ক্ষতির হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলএনজি’র ব্যবহার বাড়লে ২০৩০ এ কার্বন ডাই অক্সাইড এর বার্ষিক নিঃসরণ কমে হবে ১০০ মিলিয়ন টন। আর বিদ্যুৎ আমাদনি ( মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ) মাধ্যমে নির্গমন ৩০ মিলিয়ন টন পর্যন্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জ্বালানির ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি, গ্রিড বহির্ভূত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, সিস্টেম লস কমালে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বুধবার বিদ্যুৎ বিভাগে এক কর্মশালার আয়োজন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ইউএসএইড বাংলাদেশের সহকারি পরিচালক ( অর্থনৈতিক বিকাশ), সাসটেইনবল অ্যান্ড রিনেবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ( স্রেডা) চেয়ারম্যান তাপস কুমার রায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, ইউএসএইড ক্যাটালাইজিং ক্লিন এনার্জি ইন বাংলাদেশ (সিসিইবি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রসারে ভূমিকা রাখছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় নীতিগত পরিবর্তন আনার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউএসএইড। যাতে পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমাত্রিকতা আনায়নের মাধ্যমে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমানো সম্ভব হয়।
মন্তব্য চালু নেই