ফেনীতে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ চালক-হেলপার

বের হলে পোড়ার ভয়, ঘরে থাকলে খাওয়া বন্ধ!

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধে শঙ্কিত দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ। বিশেষ করে যারা গাড়ি চালায় বা গাড়িতে চড়ে। এর মধ্যে আরও বেশি আতঙ্কে রয়েছে ট্রাক চালকরা। যারা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকাবাসীর জন্য খাদ্যপণ্য নিয়ে আসে। আতঙ্কের কারণেই ঢাকায় খাদ্য-পণ্য আমদানি কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। বেড়েঁছে পরিবহন খরচ। ধীরে ধীরে বাড়ছে এসব খাদ্যপণ্যের দাম। ভেঙে পড়ছে পণ্যের সাপ্লাই চেইন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি নিয়ে আসা ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবরোধের কারণে সারা পথেই থাকতে হয় আতঙ্কে। ঝুঁকির মধ্যে আসতে হয় বলে মহাজনদের গুণতে হয় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া। যে কারণে অনেকে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় দিতে হয় চাঁদা। খুব বেশি টাকার দরকার না থাকলে অনেকে গাড়ি বেরই করেন না।
রাজশাহী থেকে সবজি নিয়ে আসা ট্রাকচালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘সারা রাস্তায় আসতে হয় ঝুঁকি মাথায় নিয়ে। কি করমু! বের হলে রাস্তায় যেমন পোড়ার ভয় থাকে, তেমনি ঘরে বসে থাকলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দুই তিনদিন পরপর একটা করে ট্রিপ মারি।’
কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কামাল বলেন, ‘আমি বিভিন্ন এলাকায় মাল আনতে যাই। অবরোধে এমন বিপদে পড়ছি; গেলেও সমস্যা, না গেলেও সমস্যা। তবে আগের চেয়ে এখন অর্ধেক মাল আনি। কারণ ট্রাক ভাড়া হয়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ। ১২-১৪ হাজার টাকার ট্রাকভাড়া এখন ৩০ হাজারের নিচে পাওয়া যায় না। এ কারণে মালও বিক্রি করতে হয় বেশি দামে।’
কুষ্টিয়া থেকে আসা ট্রাক চালক সুজলকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি তা স্বীকার করে বলেন -‘ভাই রাস্তায় চাঁদা দিতে দিতে অবস্থা খারাপ। পেট্রল বোমা মারলে তো বলে কয়ে মারবে না। একবার মারলে তো জীবন নিয়েই টানাটানি। কেমনে বের হই বলেন?’
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, টানা অবরোধের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম খানিকটা বেড়েছে। তবে আর কয়েকদিন এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগে যাবে। আর আগের চেয়ে মালও আসছে অনেক কম।’
ঢাকার কলাবাগান, হাতিরপুল, শান্তিনগর, মৌচাক, কারওয়ানবাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিমের দাম কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা, বরবটি ৮-১০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬-৮, বেগুন ৩-৫, করলা ৩-৫, ফুলকফি প্রতিপিস ৫-১০ টাকা, আলু কেজিপ্রতি ১-২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়ার কারণে কয়েকদিন ধরেই আমাদের বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে মিল রেখেই আমরা বিক্রি করছি। এতে সামান্য একটু বেড়েছ বিভিন্ন ধরণের সবজির দাম। তবে এভাবে চলতে থাকলে সবজির দাম খুব দ্রুত বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে এসব ব্যবসায়ীরা।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খাদ্যপণ্যের চাহিদা আগের মত থাকলেও কমে গেছে আমাদনি। ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলতে হয় বলে বেড়ে গেছে পরিবহন খরচ। অবরোধের প্রভাবে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে ‘পণ্যের সাপ্লাই চেইন।’ যার প্রভাবে দাম বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। পরিবহন শ্রমিকরা অনেকেই কাজকর্ম নেই বলে বেকার বসে আসে। সব মিলিয়ে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই শঙ্কায় দিন পার করছে।’

পেট্রোলবোমায় দগ্ধ চালক-হেলপার
২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালে দুর্বৃত্তদের পেট্রোলবোমায় ঝলসে গিয়ে এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন চালক রিয়াজ ও হেলপার হাসনাইন।
দগ্ধবৃহস্পতিবার রাত ৮টা দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর বিসিক এলাকায় এলে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় মিরাজ ও তার সহকারী হাসনাইন ককটেলে দগ্ধ হন।
দগ্ধ ট্রাকচালক মোহাম্মদ মিরাজ (৩২) ভোলা জেলার গৌরনদী থানার বাটামারা গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে ও তার সহকারী মোহাম্মদ হাসনাইনও একই এলাকার মোহাম্মদ মোতাহের ছেলে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় চালক মিরাজ হাসপাতালের বেডে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। তার সহকারী হাসনাইন জরুরি বিভাগে উহ! আহ! বলে ছটফট করছেন।
দগ্ধ চালক মিরাজ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর বিসিক এলাকায় দুর্বৃত্তরা চলন্ত ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার ট্রাকে ও মহাসড়কে চলাচলকারী অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। বোমার আঘাতে তিনিসহ তার সহকারী মোহাম্মদ হাসনাইন আহত হয়।
স্থানীয়রা ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
ফেনী সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু তাহের স্বপন জানান, বোমার আগুনে চালকের মাথা, বাম হাতে ও পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। তার সহকারী মাথায় ও মুখে আঘাত পেয়েছে।
ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক কামরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই