২০১৮ সালে অবসরে যাচ্ছেন মুহিত

আই উইল রিটায়ার ইন টু থাউজ্যান্ড এইটটিন। আই থিংক ইট উইলবি গুড টাইম। দ্যাট টাইম আই উইল বি এইটি ফাইভ (আমি ২০১৮ সালে অবসরে যাব। আমি মনে করে এটা একটা ভাল সময়। তখন আমার বয়স হবে ৮৫), হা হা হা-এভাবেই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে নিজের অবসরে যাওয়ার কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

বুধবার সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তহবিলের উদ্বৃত্ত ১০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে তুলে দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এটি গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনীতিবিদ ঘোষণা দিয়ে অবসরে যাননি। মুহিতের এই ঘোষণার বাস্তবায়ন হলে তিনিই হবেন প্রথম ব্যক্তি।

৮৪ বছরের মুহিত এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। শেষ বয়সে এসে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে জড়ানো মুহিত পরে পাকিস্তান আমলেই সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিল তার। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানে ওয়াশিংটন দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। আর প্রবাসী বাংলাদেশি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর মুহিত পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান মুহিত। ১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি। ১৯৮২ থেকে ৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান মুহিত। এরপর বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চপদে চাকরি করেন তিনি।

২০০১ সালে সিলেট সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে হেরে যান মুহিত। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকেই বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।

গত আট বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মুহিতের বিরুদ্ধে বলার মত কোনো অভিযোগই উঠেনি। নানা সময় তিনি সোজাসাপ্টা বক্তব্য দিয়ে দলের নেতাদের বিরাগভাজনও হয়েছেন।

গত অক্টোবরে একটি বিদেশি গণমাধ্যমেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুহিত বলেন, ‘অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা খুবই কঠিন। এই বয়সে এসে কখনও কখনও ক্লান্ত লাগে।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমার বয়সী কোনো অর্থমন্ত্রী আপনি পাবেন না।’ আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবসরে যাওয়ার ইচ্ছার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেই নিজের এই ইচ্ছার কথা জানন তিনি।

এরপর এই প্রথম তিনি তার অবসর নিয়ে কথা বললেন এবং সেটার সুনির্দিষ্ট সময়ও জানিয়ে দিলেন।

এ সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধিতে তেমন আপ-ডাউন নেই। ভারতে প্রায় আপ-ডাউন হয়। আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭.২। আশা করি আমরা সেটা অচিরেই অর্জন করতে পারবো।’

বাংলাদেশ হরতালের মত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি থেকে বের হয়ে এসেছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশে হরতাল আর কেউ ডাকবে না’। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল অনেক ভাল কেটেছে। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল হয়েছে।’

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে দেশে হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচিতে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ২০১৫ সালে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থতার পর থেকে আর এই ধরনের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে না বিএনপি। মাঝে বামপন্থী কিছু সংগঠন হরতাল ডাকলেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি এর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি এখন যে দিকে যাচ্ছে তাতে প্রবৃদ্ধি বাড়বেই। মানুষের আয়-ইনকাম বাড়ছে। সেকারণেই দ্যাট হ্যাজ বিন টোটাললি এক্সসটেড।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছি। ২০২৪ সালে মধ্যম আয়ের দেশের সিল লাগবে। এটা আনুষ্ঠানিকতা।’



মন্তব্য চালু নেই