২০১৬ ছিল ঐতিহাসিক কলঙ্ক মুক্তির বছর

৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দুই শীর্ষ রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৬ সালে। জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতির কলঙ্ক মুক্তির একটি বছর হিসেবে ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে ২০১৬ সালটি।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকার’ হিসেবে উল্লিখিত কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় আলবদর বাহিনীর স্থাপিত ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিত নির্যাতনকেন্দ্র ‘ডালিম হোটেল’ এর নিয়ন্ত্রক ‘বাঙালি খান’ মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে।

নিজামীর ফাঁসি

২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীকে ফাঁসির দণ্ড দেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। ওই আপিল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিজামীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।

এরপর আপিল বিভাগে বহাল থাকা ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আবেদন করেন নিজামী।

২০১৬ সালের ৫ মে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে নিজামীর ফাঁসির দণ্ডই বহাল থাকে।

এরপর শেষ সুযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করায় ২০১৬ সালের ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হয় মানবতাবিরোধী অপরাধী নিজামীর ফাঁসি।

মতিউর রহমান নিজামী ২০০০ সালে জামায়াতের আমির হন। এছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্পমন্ত্রী হন।

মীর কাসেমের ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ জুন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর দুটি অভিযোগে তাকে ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম আলী।

২০১৬ সালের ৮ মার্চ আপিলের রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার (১১ নম্বর অভিযোগ) দায়ে মীর কাসেমকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। অন্য ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড বহাল থাকে।

তবে আপিলের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৬ সালের ১৯ জুন রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী।

রিভিউ শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট মীর কাসেমের রিভিউ খারিজ করে দেন। রিভিউ খারিজের ফলে মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল থাকে।

সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করায় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে জামায়াতে ইসলামীর অর্থের জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে কার্যকর করা হয়।

এই মীর কাসেম আলী ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির কার্যকর হয়।খবর পরিবর্তনের।



মন্তব্য চালু নেই