‘১২টার মধ্যে টাকা বিকাশ কর, নইলে ছেলের লাশ নিয়ে যা’

কাছাকাছি বয়সের ইমরান হোসেন ও শাকিল মিয়া দুজনই ছিলো ধামরাইয়ের ব্র্যাক স্কুলের ছাত্র। নিখোঁজ হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে মোবাইল ফোনে অপহরণকারী পরিচয়ে শিশু দুটির পরিবারের সদস্যেদের কাছে এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

ইমরানের চাচাতো ভাই কবীর বলেন, ‘মির্জাপুরে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে এসে স্থানীয় হাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। আমরা প্রথম দিকে মনে করেছি আমাদের আশে পাশের আত্মীয় বাড়িতে হয়তো গেছে।’

‘কিন্তু আমারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পাইনি। বৃহস্পতিবার সকালে আমরা মাইকিং করি, স্থানীয় ক্যাবল লাইনেও নিখোঁজ হওয়ার বিজ্ঞাপন দেই।’
কবীর আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকালে মুঠোফোনে একটি বাংলালিংক নাম্বার ‘০১৯৬৬৮২০১৮৬’ থেকে ফোন করে রাত ১২টার মধ্যে এক লাখ টাকা বিকাশ বলা হয়। ওই সময় অপহরণকারীরা বলে, রাত ১২টার মধ্যে টাকা বিকাশ না করলে শিশুর লাশ কাঁধে করে নিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা টাকা নিয়ে প্রস্তুতও হয়েছিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ থাকায় আমরা আর যোগাযোগ করতে পারি নাই।’
জানা গেছে, নিহত দুই শিশুর বাবা আবু বক্কর ও দেলোয়ার হোসেন দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইরাকে কর্মরত।
পরিবার দুটির দাবি, মুক্তিপণের টাকা সঠিক সময়ে না পাওয়ার কারণেই নির্মমভাবে তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকা শেষ হওয়ার এক’শ গজের ভিতরে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। শিশু দু’টির পরিবার এখনো থানায় কোনো যোগাযোগ করেনি। থানা থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘শিশুদের পরিবার থেকে যদি মির্জাপুর থানায় মামলা করতে চায়,তারা করতে পারবে।’

অপহরণকারীদের কোনো খোঁজ মিলেছে কিনা জানতে চাইলে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, তারা অপহরণকারীদের ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, শিশুরা অপহরণকারীদের চিনে ফেলায় হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
খুব দ্রুতই অপহরণকারীদের আটক করা হবে জানান এ কর্মকর্তা।

রেজাউল হক জানান, অপহরণের পর শিশুদের পরিবার থেকে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি। শুক্রবার থানায় জিডি করতে আসার পরপরই তার খবর পায় শিশুদের লাশ উদ্ধারের।
গত বুধবার অপহৃত হওয়া এ দুই শিশুর মরদেহ শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া ময়ুরভাঙ্গা এলাকার লেবু বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই