১১শ’ বাস-ট্রাক কিনছে সরকার

ভারতীয় ঋণে ১ হাজার ১০০ বাস ও ট্রাক কিনছে সরকার। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির মতো দেশের প্রতিটি জেলায় এসব বাস ও ট্রাক বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করবে। এর মধ্যে ৬০০টি বাস ও ৫০০টি ট্রাক। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ভারতীয় ঋণের অর্থে এসব যানবাহন আনছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বাসগুলোর মধ্যে ডাবল ডেকার ও সিঙ্গেল ডেকার এসি ও নন-এসি বাস রয়েছে। এসব বাস কেনায় ব্যয় হবে ৫৮০ কোটি টাকা। এতে ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-২) এর আওতায় প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ৪৩৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বাকি ১৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।

অন্যদিকে ভারতীয় ঋণে আলাদা প্রকল্পের আওতায় কেনা হচ্ছে ৫০০ ট্রাক। বিআরটিসি এসব ট্রাক সারা দেশে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহনে ভাড়া দেবে। এসব ট্রাক ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আলাদাভাবে উঠছে দুটি প্রকল্প। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনা।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত এসব বাস ও ট্রাক ক্রয় করা হলে বিআরটিসির আওতায় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া সমগ্র দেশব্যাপী পণ্য পরিবহন সেবা বৃদ্ধি ও যাত্রীদের যাতায়াত সহজ হবে। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

জানা গেছে, ৬০০টি বাসের মধ্যে ডাবল ডেকার ৩০০টি, সিঙ্গেল ডেকার এসি সিটি বাস ১০০টি, সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি বাস ১০০টি ও সিঙ্গেল ডেকার নন-এসি বাস ১০০টি।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম কমিশনের মতামতে বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে বিআরটিসির আওতায় গণপরিবহন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সারাদেশে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাসহ আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

বিআরটিসি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীতে উন্নত ও সমন্বিত পরিবহন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য মানসম্মত বাসের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এদিক দিয়ে যাত্রীদের কাছে বিআরটিসির বাসের কদর বাড়ছে। পরিমাণের স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

অপরদিকে দেশের অধিকাংশ জেলায় এখনো সরকারি পরিবহন যেতে পারেনি। তাই নতুন বাস সংযোজনের মাধ্যমে তাদের বাসের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি বিদ্যমান সমস্যাগ্রস্ত বাসগুলো প্রতিস্থাপনও করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে নতুন নতুন রুটে বিআরটিসি তথা সরকারি গণপরিবহন চলাচল শুরু করবে। এতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে যাত্রীসেবাও বাড়বে। ভবিষ্যতে বেসরকারি বাসের সঙ্গে বিআরটিসি সমান তালে তাদের সেবা অব্যাহত রাখবে।

এদিকে ‘বিআরটিসিরি জন্য দ্বিতল ও একতলা এসি, নন-এসি বাস সংগ্রহ’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির ওপর প্রাক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিআরটিসি প্রতিনিধি জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিআরটিসি চায়না থেকে ২৭৫টি, কোরিয়া থেকে ২২৫টি এবং ভারত থেকে ৪২৮টি বাস কেনে। মোট সংগৃহীত ৯৫৮টি বাসের মধ্যে ৭৩৩টি সচল এবং ১৯২টি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া ৩৩টি বাস বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবনায় বিআরটিসি তাদের বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩২টি বলে উল্লেখ করে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বিআরটিসির ট্রাক সরকারি বিভিন্ন অধিদফতর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়।

মৌসুমি ফল, পোল্ট্রি সামগ্রী, ওষুধ ও পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত পণ্যসামগ্রী এবং অন্যান্য পচনশীল পণ্য পরিবহনের জন্য বিপুল সংখ্যক ট্রাকের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- সাইক্লোন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং জরুরি প্রয়োজনে বিআরটিসির ট্রাক সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে পণ্য পরিবহন খাতে বিআরটিসির সেবা বাড়াতে পুরনো ট্রাক প্রতিস্থাপন এবং নতুন ট্রাক সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, ট্রাকগুলোর মধ্যে ১৫ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৫০টি ও ১০ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫০টি। এছাড়া খুচরা যন্ত্রপাতি এবং আনুষঙ্গিক সেবা ক্রয়, রেজিস্ট্রেশন ফি, ক্লিয়ারিং-ফরোয়ার্ডিংয়ের এলসি কমিশন, ইমপোর্ট ডিউটি এবং ভ্যাট প্রদানসহ বিাভন্ন কর্মকাণ্ডে বরাদ্দের অর্থ ব্যবহার হবে।



মন্তব্য চালু নেই