১০ বছর ধরে আটকা পুলিশ সংস্কারের অধ্যাদেশ
পুলিশকে নতুন রূপে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আবার সরকারই ১০ বছর ধরে আটকে রেখেছে পুলিশ সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত একটি অধ্যাদেশ, যেটি ‘বাংলাদেশ পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭’ নামে পরিচিত।
পুলিশকে আরও জনবান্ধব ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ওই সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এস এম শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি কমিটি পুলিশ সংস্কারের খসড়া অধ্যাদেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলার তৃণমূল পর্যায় থেকে জনমত সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু প্রায় ১০ বছরেও অধ্যাদেশটি আলোর মুখ দেখেনি।
দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা প্রসঙ্গটি প্রতি বছর পুলিশ সপ্তাহের সময় নানা মহলে আলোচনায় ওঠে। এবারের পুলিশ সপ্তাহেও প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে কথা বলে যেটি পাওয়া যায়, তা হলো এতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রশ্নটি দেখেন তারা। তারা বলেন, প্রশাসন মনে করে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে পুলিশকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাতে পুলিশে মন্ত্রণালয়ের ‘খবরদারি’ কমে যাবে। একই সঙ্গে পুলিশে রাজনৈতিক প্রশাসনের হস্তক্ষেপে লাগাম টানা হয়েছে ওেই অধ্যাদেশে। ফলে অধ্যাদেশটির বিষয়ে এই দুই পক্ষ আন্তরিক নয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, এই আইনটি কেন এখনো পাস হয়নি, সেটা অনেকেরই প্রশ্ন। তবে আইনটি পাস হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভূমিকাই প্রধান বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মাহফুজুল হক মারজান বলেন, ‘পুলিশ অধ্যাদেশ পাস হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে আমলারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা তাদের ইচ্ছামতো পুলিশের পদায়ন, বদলি ও নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। মূলত তাদের কারণে পুলিশ অধ্যাদেশটি পাস হচ্ছে না।’
মাহফুজুল হক আরো বলেন, ‘আর আমরা ব্রিটিশ আমল থেকে দেখে আসছি রাজনৈতিক নেতারা পুলিশকে তাদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছেন। পুলিশ অধ্যাদেশ পাস হলে সেই সুযোগ থাকবে না রাজনৈতিক নেতাদের।’
ওদিকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও মনে করেন, এই অধ্যাদেশ পাস হলে পুলিশের ওপর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমে আসবে। তারা চান এটি দ্রুত পাস হোক। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা মনে করেন, এটি পুলিশকে আরও বেশি পেশাদার বাহিনীতে রূপান্তর করবে। পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না বলে আইনের শাসন কায়েম করা সহজ হবে।
এত দিনেও প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটির পাস না হওয়া ও এর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ ব্যাপারে পুলিশের আইজিপিকে জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘উনিই (আইজিপি) পুলিশ অধ্যাদেশের ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’
পরে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হককে পেলেও তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কী আছে পুলিশ সংস্কার প্রস্তাবে
ব্রিটিশ আমলে ১৮৬১ সালে প্রণীত আইন দিয়ে চলছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। বর্তমান বাস্তবতায় ঔপনিবেশিক আমলের বিধি-বিধান কার্যকর নয় বলেই মনে করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর বিশেষজ্ঞরা বলেন, মূলত জনগণকে শাসন করার মানসিকতা থেকেই প্রণীত হয়েছিল ১৮৬১ সালের আইনটি। ২০০৭ সালের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে তা থেকে বেরিয়ে আসার একটা চেষ্টা আছে; পুলিশকে সেবাদানকারী সংগঠনে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক চাপে পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত কাউকে দুই বছরের আগে বদলি করা যাবে না। পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য বা যেকোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির মৌখিক, লিখিত বা টেলিফোনে সুপারিশ ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
বিদ্যমান আইনে গুলির ব্যবহারসহ এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত করার এখতিয়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধ বা পুলিশ হেফাজতে কারও মৃত্যু হলে তা আইনসঙ্গত ছিল কি না তা তদন্ত করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এসব ক্ষেত্রে খসড়া প্রস্তাবে ১১ সদস্যের জাতীয় পুলিশ কমিশন, ৫ সদস্যের স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে দ্রুত সাজা দেওয়ার জন্য পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে।খবর ঢাকাটাইমসের।
মন্তব্য চালু নেই