সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত নতুন বেতন স্কেলে বর্তমানের ২০টির পরিবর্তে ১৭টি গ্রেড নির্ধারণ করা হচ্ছে

১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পে কমিশনের প্রতিবেদন জমা সরকারের কাছে

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করতে যাচ্ছে সরকার গঠিত পে কমিশন। নতুন বেতন স্কেলে বর্তমানের ২০টির পরিবর্তে ১৭টি গ্রেড নির্ধারণ করা হচ্ছে। নতুন বেতন কাঠামো পুরোপুরি বাস্তবায়নে বর্তমানের চেয়ে অতিরিক্ত ১৭ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পে কমিশন সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পে কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
পে কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

পে কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সমকালকে বলেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বর কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তার আগেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হলে তাদের আকর্ষণীয় বেতন দিতে হবে।

কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই উপকৃত হবেন। পে কমিশনের অন্যতম সদস্য আবুল কাসেম বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা দুর্ঘটনার শিকার হলে যাতে আর্থিক সুবিধা পান, সে জন্য বীমা সুবিধা দেওয়ারও সুপারিশ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বর্তমানে যে বেতন কাঠামো রয়েছে, মূল বেতনের (বেসিক) চেয়ে গড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করছে পে কমিশন। নতুন কাঠামোতে মূল বেতন সর্বোচ্চ ৭২ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। এর সঙ্গে বিদ্যমান বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, উৎসব, শান্তি, বিনোদন, টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা যৌক্তিক করার প্রস্তাব থাকছে পে কমিশনের সুপারিশে।

সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসিক সংকট মোকাবেলায় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারেন। তাদের জন্য কম সুদে অগ্রিম ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে পে কমিশন। যার যার বেতন গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত অঙ্কের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। মাসিক বেতন থেকে এ ঋণ সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বীমা, জীবন বীমা ও দুর্ঘটনাজনিত অক্ষমতা বীমার সুপারিশ করা হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন নির্ধারণ করার কথা। এখন যে বেতন কাঠামো কার্যকর রয়েছে তা ২০০৯ সালে করা, যাতে আগের চেয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমান কাঠামোতে সর্বোচ্চ বেতন স্কেল ৪০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। এর সঙ্গে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যুক্ত আছে। নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের আগে সরকারি চাকরিজীবীরা ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন, যা ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। যখন নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে তখন মহার্ঘ ভাতা সমন্বয় হয়ে যাবে।

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গত অর্থবছরের বাজেটে পে কমিশনের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বছরের নভেম্বরে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে পে কমিশন কার্যকর করা হয়। ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও বটে।

সূত্রঃ সমকাল(অনলাইন ভার্সন)।



মন্তব্য চালু নেই