হ্যাপির ধর্ষণ মামলা থেকে রুবেলের অব্যাহতি
চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ রুবেল হোসেন।
ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের কাছে জমা দেয়া তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি বুধবার বিচারক তানজিনা ইসমাইল গ্রহণ করলে রুবেল এ অব্যাহতি পান।
এদিকে বেলা ১১টা ৪০মিনিটে তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপীর নারাজি আবেদনের শুনানি শেষ হয়।
আসামি রুবেলের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। হ্যাপীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মনসুর রিপন ও অ্যাডভোকেট তুহিন হাওলাদার।
এর আগে হ্যাপীর পক্ষে নারাজি দাখিল করেছিলেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তুহিন হাওলাদার। তিনি বলেছিলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে মামিলাটির ঘটনাবলী তদন্ত করেননি। তদন্ত করমকর্তা বাদিকে তার সাক্ষিদের হাজির করার জন্য কোনো নোটিশ দেননি এবং বাদির সাক্ষিদের কোনো বক্তব্য না নিয়েই তিনি এই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, যা বাদি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বিধায় তিনি নারাজি দাখিল করলেন।’
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে নাজনীন আক্তার হ্যাপী জানান- যদি মামলা তুলে নেয়ার সুযোগ থাকতো, তবে তিনি মামলা তুলে নিতেন। কিন্তু সেই সুযোগ না থাকায় এখন থেকে আর মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ দাঁড় করাবেন না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রুবেলকে আমি খুব ভালোবাসি। ওর সঙ্গে মামলা করে শত্রুতা করতে চাইনি। শুধু ভালোবাসার অধিকার ফিরে পেতে চেয়েছি।’
তিনি আরো জানান, শুধু রুবেলকে দেখার জন্য তিনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দু’টি ম্যাচ দেখেছেন। হ্যাপীর বিশ্বাস, রুবেল যদি তাকে কোনোদিন সত্যি ভালোবেসে থাকেন, তাহলে একদিন না একদিন আবার তার কাছে ফিরে আসবেন।
গত ১৯ মার্চ রুবেলের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক হালিমা খাতুন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিকটিম হ্যাপীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হলে ৩ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড জানায় সম্প্রতি হ্যাপীর শরীরে কোথাও জোরপূর্বক ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
হ্যাপীর (বাদি) দাবি অনুযায়ী রুবেলের পরিহিত জার্সি, পাপোষ এবং নাইটি পরীক্ষা করে তাতে রুবেলের কোনো বীর্য পাওয়া যায়নি মর্মে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হ্যাপী একজন প্রাপ্তবয়স্ক, মিডিয়াতে কাজ করা সচেতন ও আধুনিক একজন ব্যক্তি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্বেও বিবাহ নামক সম্পর্ক ছাড়া যদি তিনি রুবেলের সঙ্গে মেলামেশা করে থাকেন তবে তিনি সেটা তার (বাদি) সম্মতিতেই হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বাদির অভিযোগ মতে সেটা ধর্ষণের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না।
তাছাড়া হ্যাপী তার বক্তব্যের সমর্থনে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হ্যাপী রুবেলের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণের যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয় বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের শেষদিকে বলা হয়েছে, সার্বিক তদন্ত, সাক্ষ্য, ডাক্তারি রিপোর্ট, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রুবেলের বিরুদ্ধে হ্যাপীর অভিযোগ সঠিক নয়। এজন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছে আসামি রুবেলের অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন।
এদিকে রুবেলের অব্যাহতি চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ব্যাপারে হ্যাপীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজামান হাওলাদার তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, হ্যাপীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর নবাগত অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী ধর্ষণের অভিযোগ এনে রাজধানীর মিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯/১ ধারায় এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মামলা দায়েরের পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে নায়িকা হ্যাপীকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
নবাগত এ নায়িকা ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়া তার কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী।
মন্তব্য চালু নেই