হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানিতে বছরের পর বছর চলছে নৈরাজ্য

শতকোটি টাকার অনিবন্ধিত (আন-রেজিস্টার্ড) হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানি হচ্ছে দেশে। কোনরকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই স্বয়ং ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এগুলোর অনুমোদন দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসনের এক শ্রেণীর অতি উত্সাহী কর্মকর্তা ও একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব আন-রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানির অনুমোদনের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অথচ ১৯৮২ সালের ড্রাগ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসনের বৈধ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোন ওষুধ উত্পাদন, বাজারজাত, আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

জানা যায়, বিগত ৩৩ বছর ধরে হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানিকারকগণ রেজিস্ট্রেশন না নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বছরে প্রায় শতকোটি টাকার আন-রেজিস্টার্ড ওষুধ আমদানি নির্বিঘ্নে চালিয়ে আসছেন। আর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এই হোমিওপ্যাথি ওষুধের অবৈধ আমদানির সঙ্গে জড়িত। অথচ এই ওষুধ প্রশাসনই দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আন-রেজিস্টার্ড ওষুধ উদ্ধার, জেল জরিমানা করছে।

সম্প্রতি ডিজি ড্রাগের দায়িত্বে থাকা একজন পরিচালক ১৮ কোটি টাকার আন-রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানির অনুমোদন সংক্রান্ত একটি ফাইল ফেরত পাঠিয়ে দেন। ফাইলটি তার কাছে গেলে তিনি ১৯৮২ সালের ড্রাগ অর্ডিন্যান্স লংঘন করে আন-রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানির চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এদিকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সব সরকারের আমলে ক্ষমতাবান থাকেন এমন একজন পরিচালক এসব আন-রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানির সঙ্গে জড়িত। তিনি কোন ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বই তার কাছে। সব ধরনের ওষুধ আমদানিও তিনি দেখভাল করেন। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন তৈরি হলেও অভিযোগ রয়েছে ওষুধ প্রশাসনের উক্ত ক্ষমতাধর পরিচালকের কারণেই শত শত কোটি টাকায় উচ্চ মূল্যের বিদেশি ইনসুলিন আমদানির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। অথচ দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি মানসম্মত ইনসুলিন তৈরি করছে। ইতিপূর্বে ওষুধ প্রশাসন থেকে বায়োটিন নামক ভিটামিনসহ কোটি কোটি টাকার অনেক অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ম বহির্ভূতভাবে এনওসির মাধ্যমে আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরও কোন তদন্ত হয়নি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশে রয়েছে ৮০টিরও বেশি হোমিওপ্যাথি ওষুধ কোম্পানি। দেশের মাত্র ৯ জন হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানিকারক বছরে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকার আন-রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমদানি করেন। দেশের দুই শতাধিক এলোপ্যাথিক ওষুধ কোম্পানি ১৯৮২ সালের ড্রাগ অর্ডিন্যান্স অনুসারে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ওষুধ উত্পাদন ও ক্ষেত্র বিশেষে ওষুধ আমদানি করে থাকে। অথচ হোমিওপ্যাথি ওষুধ ড্রাগ অর্ডিন্যান্স লংঘন করে কেন অবৈধভাবে আমদানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক



মন্তব্য চালু নেই