হৃদরোগের সমস্যা বাড়ায় আত্মহত্যার ঝুঁকি

তাইওয়ানের নতুন এক গবেষণা মতে, অ্যাকিউট করোনারী সিনড্রোম আছে যাদের (হৃদপিন্ডে খুব কম রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে) তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশী থাকে – বিশেষ করে রোগ নির্ণীত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে।

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের সাময়িকীতে গবেষকেরা এটি লিখেন যে, অ্যাকিউট করোনারী সিনড্রোম এর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হয় যাকে পরিবর্তনশীল কন্ঠনালীপ্রদাহ (অ্যাজিনা) বলে। যা পূর্বে ডিপ্রেশন এবং খারাপ স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত বলা হয়েছে।

যদিও গবেষকেরা তীব্র করোনারী সিনড্রোম এবং আত্মহত্যার সম্পর্কের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দৃষ্টিপাত করেননি।

নতুন গবেষণার জন্য তাইপে এর ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের ডা. চাউ হান লিউ এবং তার সহকর্মীরা ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশী বয়সের ৪১,০৫০ জন মানুষ যারা ২০০০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন আত্মহত্যা করে এবং ১,৬৪,২০০ জন মানুষ যারা নিজেদের জীবনের সংহার নিজেরা করেননি এমন দুটি দলের তথ্য বিশ্লেষণ করেন।

আত্মহত্যার দলটিতে তীব্র করোনারী সিনড্রোমের হার ছিলো ২.৫ শতাংশ এবং অন্য দলটিতে তা ছিলো ১.৫ শতাংশ।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, আত্মহত্যার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে বলে বিশ্লেষণে জানা যায়। তীব্র করোনারী সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের নিজেদের জীবন সংহার করার হার অন্য স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশী ছিলো।

আত্মহত্যার ঝুঁকি চার বছর ধরে চলতে থাকে কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য ভীতি দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে থাকে। গবেষকেরা দেখেন যে, অন্য দলটির তুলনায় এই (হৃদরোগ) রোগীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঝুঁকি ৩ গুণ বেশী ছিল রোগ নির্ণয়ের ছয় মাসের মধ্যে।

এছাড়াও আত্মহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বয়স এবং ঘন ঘন স্বাস্থ্য পরিসেবা পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে।

নিউ ইয়র্ক শহরের কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার এর ব্যবহারিক কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ডোনাল্ড এডমন্ডসন রয়টার্স হেলথকে বলেন, “সমীক্ষার তথ্য শক্তিশালী এবং মানুষের উচিৎ এর প্রতি মনোযোগ দেয়া”।

যদিও জরুরী বিভাগের চিকিৎসক এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা কার্ডিয়াক ঘটনার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ে সচেতন হয়ে উঠছেন, কেন এই রোগীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি – এডমন্ডসন এমনটাই বলেন, যিনি এই নতুন গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

ওহাইয়ো এর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সমীর কাপাডিয়া বলেন, “হার্ট অ্যাটাকের পরের বিষণ্ণতার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ”।

“বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীদের যারা যত্ন নেন তাদের উচিৎ রোগীদের বুকে ব্যথা এবং হৃদপিণ্ডের সমস্যার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা” – ডা. সমীর কাপাডিয়া এমনটাই বলেন, যিনি নিজে এই নতুন গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

কাপাডিয়া রয়টার্স হেলথকে বলেন, তীব্র করোনারী সিনড্রোম শনাক্ত হওয়ার কারণে যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের চিকিৎসকের সাথে খোলাখুলি কথা বলা উচিৎ যাতে তারা নিরাময় লাভ করেন।

এডমন্ডসন বলেন, পরিবার ও বন্ধুদের সজাগ হওয়া উচিৎ এবং রোগীর সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলা উচিৎ, প্রয়োজনে উপযুক্ত অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে সাহায্য করা উচিৎ।

তিনি বলেন, “আপনার স্বামী, স্ত্রী বা অন্য কেউ এমন সমস্যার মধ্য দিয়ে গেলে ও তাদের কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা গেলেও তারা তাদের সত্যিকারের মানসিক প্রভাবের বিষয়ে বলতে সক্ষম হন না”।



মন্তব্য চালু নেই