হামলার চূড়ান্ত ছক হয় নর্থ সাউথ প্রোভিসির বাড়িতেই

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলার আগে জঙ্গিদের চূড়ান্ত বৈঠকটি হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত সহউপাচার্য (প্রোভিসি) গিয়াস উদ্দিন আহসানের বাড়ির ৬ষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে। শুধু তা-ই নয়, হামলার আগে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলোও মজুদ করা হয়েছিল সেখানে।

গুলশান হামলায় অংশ নেয়া নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। আবার জিম্মি অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হওয়া হাসনাত রেজাউল করিম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। এছাড়াও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত আবিরও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই তিন কারণে জঙ্গি হামলার মদতদাতা হিসেবে সন্দেহের তীর যখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে, ঠিক তখনই জানা গেলো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসির বাসায় ভাড়া থেকেই পাঁচ জঙ্গি হামলা চালায় গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে।

পুলিশের দাবি, বাসা ভাড়া দেয়ার সময় বাড়ির মালিক গিয়াস উদ্দিন আহসান যদি ডিএমপির সরবরাহকৃত ভাড়াটিয়া তথ্যফর্মটি ছবিসহ পূরণ করিয়ে নিতেন, তাহলে হামলার আগেই পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ছয় নম্বর সড়কের ব্লক ই এর টেনামেন্ট-৩ এর ফ্ল্যাট এ/৬ এ অভিযান চালিয়ে হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করার আলামত পায় গোয়েন্দারা। পরে ওই বাড়ির মালিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রোভিসি গিয়াস উদ্দিন আহসান, তার ভাগ্নে আলম চৌধুরী এবং ভবনের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান তুহিনকে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ওই বাসার সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি বালুভর্তি কার্টন উদ্ধার করা হয়, যা দেখে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন হামলার আগে ওই বাসাতেই গ্রেনেড ও অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছিল জঙ্গিরা।

তিনি আরো জানান, জঙ্গিরা চলতি বছরের ১৬ মে ২২ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে ৪০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে ওই বাসায় ওঠে। এরপর পুরো জুন মাস নিবরাসসহ অন্য পাঁচ জঙ্গি পরিচয় গোপন করে সেখানে থেকেই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টটি রেকি করে। হামলার চূড়ান্ত ছকও ওই বাসাতে বসেই প্রস্তুত করা হয়।

এর আগে জঙ্গিরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যে বাসায় থাকতো, সেই বাসার মালিকের কোনো গাফিলতি বা সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেছেন, ‘ভাড়াটিয়া তথ্য ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ করিয়ে থানায় না জমা দেয়ার কারণেই এইসব দুর্ধষ জঙ্গিদের সম্পর্কে আমরা আগাম কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। যদি ওই বাসার মালিক সঠিক প্রক্রিয়ায় ভাড়াটিয়াদের তথ্যগুলো সরবরাহ করতেন, তাহলে নিশ্চই হামলার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করা যেতো।’

গুলশান হামলা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কমিশনার বলেন, ‘তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দোষীদের আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। নির্দেশ দাতাদেরও সন্ধান মিলেছে। তবে যেহেতু এটি একটি তদন্তাধীন মামলা, তাই আগেই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

এদিকে ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান আরো জানান, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে রোববার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে চাওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের সময় জঙ্গিরা ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের বোমায় নিহত হোন দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ওই রেস্তোরাঁর শেফ সাইফুল চৌকিদারসহ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।



মন্তব্য চালু নেই