হাইকোর্টে অঝোরে কাঁদলেন সেই স্কুল শিক্ষার্থী সাব্বির

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষার্থী সাব্বির শিকদার তার উপর স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। ভয়াবহ এই নির্যাতনের বর্ণনা শুনে বিচারক, আইনজীবী ও আদালতকক্ষে উপস্থিত সকলে স্তম্ভিত হয়ে যান।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বর্ণনা দেন সাব্বির।

স্থানীয় এমপি অনুপম শাহজাহান জয়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দেন বলে দাবি করেন সাব্বির। তিনি বেঞ্চের সামনে বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৯টার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। এমন সময় বাইরে থেকে কেউ আমাকে ডাক দেয়, ‘সাব্বির বাড়িতে আছো।’ আমি বাইরে এসে দেখি পুলিশ। তারা আমাকে বলেন, ‘তোমাকে থানায় যেতে হবে। এরপর আমাকে থানা নিয়ে গিয়ে ওসির রুমে নিয়ে যায়। ওসি আমাকে মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলেন, এগুলো কি লিখছস। আমি বলেছি, এগুলো আমি লিখি নাই। এরপর বারবার আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি আবারও বলি লিখি নাই। এরপর আমাকে এমপির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এমপির বাসায় গিয়ে দেখি তিনি সোফায় বসে আছেন। আমাকে তার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আমাকে বলেন, তুই আমার বিরুদ্ধে কি লিখছস? এরপর এমপি আমাকে দুটি বাড়ি মারেন। কিন্তু এতে আমি কিছু মনে করি নাই। এ সময় এমপি ওসিকে বলেন, ওকে থানায় নিয়ে যাও। তারপর আমাকে থানায় নিয়ে এসে চোখ বেঁধে বেদম নির্যাতন করে এবং আমাকে বলে, তোকে ক্রসফায়ারে দেব। ক্রসফায়ারের ভয় এবং নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য স্বীকার করেছি, আমি লিখেছি। তারপর আমাকে বলে, এ ধরণের লেখা আর লিখবি না। এ ঘটনার তিনদিন পর আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (টিএনও) রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। টিএনও আমাকে বুকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এসময় আমার হুঁশ ছিল না। কে যেন আমাকে ওইখান থেকে উঠিয়ে নেয়। আমাকে থানায় নিলে ওসি বলে তোমাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

এ সময় সাব্বির আদালতে কান্নায় ভেঙে পরে বলেন, ‘আমি এই ঘটনার বিচার সরকারের কাছে চাই। আমি সঠিক বিচার চাই।’

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কেউ কি তোমাকে এই বক্তব্য শিখিয়ে দিয়েছেন। তখন সাব্বির বলেন, কেউ শিখিয়ে দেননি। এর সঠিক বিচার চাই।’

পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

আদালত টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সখীপুর থানার ওসিকে তলব করায় তারা আদালতে হাজির ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই