সোমবার দুপুরে নীলফামারী ডায়াবেটিক হাসপাতালের সম্মেলণ কক্ষে আয়োজিত “গাড়ী চালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সম্প্রতি নেপালের ভূমিকম্পে যত মানুষ মারা গেছে তার দ্বিগুন মানুষ বাংলাদেশের প্রতি বছর সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলেও দেশের সরকার বা জনগন বিষয়টিকে তেমন আমলে নিচ্ছেনা ।

তিনি বলেন, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ মারা যায় । অথচ এই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যতটা কাজ করা দরকার, সাহায্য-সহযোগীতা করা দরকার সেটা কিন্তু সরকারের তরফ থেকে করা হচ্ছে না ।

সড়ক দূর্ঘটনার রোগীদের এক ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া গেলে মৃত্যূ বা পঙ্গুত্বের হার অনেক কমে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এজন্য দেশে একটি সেন্ট্রাল অর্থোপেডিকস হাসপাতাল তৈরীর পাশাপাশি মহাসড়কের প্রতি ২০ কিলোমিটার অন্তর একটি করে ট্রমা সেন্টার স্থাপন করা ও রোগীদের উদ্ধারের জন্য রেসকিউ টিম তৈরী করা প্রয়োজন ।

সম্প্রতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজানার খানের দেওয়া ‘গরু-ছাগল চেনা গেলেও লাইসেন্স দেওয়া যাবে’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, তিনি একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি হয়ে এসব কথা বলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন । যা দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দুঃখজনক ।

সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সরকারের শুধু মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি ছাড়া আর কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না । তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আগামীতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রনালয়কে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

দুর্ঘটনা বাড়ার পিছনে গাড়ি, চালক, পথচারীসহ আমরা সবাই দায়ী উল্লেখ করে নিসচা চেয়ারম্যান বলেন, ২৩বছর আগে ৪/৫টি কারণে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটলেও এখন অন্তত ৫০টি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে ।

চালকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গাড়ির হ্যান্ডেল ধরলে গাড়ি চালানো যায় না । গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপদজনক কাজ । সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে গাড়ি চালাতে হবে । অধিকাংশ চালকরা প্রশিক্ষিত নন । তবে এখন চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে । শুধু চালকরা প্রশিক্ষত হলেই হবে না পথচারীদের অদক্ষতার কারনে দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে । তাই যাত্রী, পথচারী, চালক, মালিকসহ সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান ইলিয়াস কাঞ্চন ।

এসময় তিনি আরো বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সরকারের সহযোগীতায় ২০১৭ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পাঠ্য পুস্তুকে সচেতনতা মুলক বিষয় সংযুক্ত করা হবে ।

নীলফামারী পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদের সভাপতিতত্বে “সাসটেইনেবল রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, এলজিইডি ও নিরাপদ সড়ক চাই এর উদ্যোগে এ কর্মশালায় প্রজেক্টের বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল বাছেদ, এলজিইডি নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী হক মাহমুদ ও নিরাপদ সড়ক চাই নীলফামারী জেলা কমিটির আহবায়ক মৃনাল কান্তি রায় ও সদস্য সচিব রাসেল আমীন স্বপন বক্তব্য রাখেন ।

দিন ব্যাপী কর্মশালায় হালকা, মাঝারী ও ভারী যানবহনের দুইশ’ জন চালক অংশ গ্রহণ করেন । বিকেলে একটি র‌্যালী শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ।
অন্যদিকে সোমবার রাতেই সৈয়দপুরে নিরাপদ সড়ক চাই ‍”নিসচার” সৈয়দপুর শাখা আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও স্থানীয় নেতৃবর্গ ।