‘স্বামী বললো ও মরলেও দু:খ নাই কিন্তু পা কাটা যাবেনা’

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এগারোশোর বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন ২৪শর বেশি। রানা প্লাজার ৫ম তলার ফ্যান্টম কারখানায় কাজ করতেন নিলুফার বেগম।

১৪ বছর ধরে পোশাক কারখানায় কাজ করে আসা নিলুফারের একটি পা কেটে ফেলতে বলেছিল চিকিৎসকরা। কিন্তু স্বামী রাজি হননি।

এখন পঙ্গুর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। সাভারের রাজাশন এলাকায় বাস করেন তিনি। তিনি শুনিয়েছেন তার অসহায় জীবনের কথা।

তিনি বলেন, আমি রানা প্লাজায় সুইং অপারেটর ছিলাম ফ্যান্টম অ্যাপারেলস। পঞ্চম তলায় ছিলো। সাড়ে পাঁচ বছর চাকুরী করেছি। বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়লো তারপর দৌড় দিয়েছিলাম। লাইনের মাথায় এসে পড়ে যাই। পা বিমের নীচে পড়েছিলো। অনেক কেঁদেছি যে আল্লাহ আমার একটা ছেলেকে এতিম করোনা।

দুর্ঘটনার পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এনাম হাসপাতালে পা অপারেশনের পর দেখা গেলো আমার কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে। ওখান থেকে ন্যাশনাল কিডনিতে। চারদিন ডায়ালাইসিসের পর মেশিন নষ্ট হয়ে গেলো। এরপর নিলো মানসিক হাসপাতালে। তারপর চক্ষু হাসপাতালে একদিন। তারপর ঢাকা মেডিকেলে পাঁচদিন থাকার পর শাহবাগ বারডেমে ছিলাম ওখানে ছিলাম ৪৬দিন। ওখান থেকে সিআরপিতে। সেখানে ছিলাম সাড়ে তিন মাস।

তিনি বলেন, সিআরপি বলছিলো পা কাটার জন্যে। কিন্তু আমার স্বামী বললো ও যদি মরেও যায় দু:খ নাই, তাও পা কাটতে দিবোনা। ক্র্যাচ দিয়ে হাটি। চলাফেরায় কষ্ট হয়। ঘুমাতে পারিনা। কাজ কর্ম করতে পারিনা। কেটে পা লাগিয়ে দিলে কাজ করতে পারতাম।

তিনি বলেন, কোন কাজই করতে পারিনা। সবকিছুতে সাহায্য লাগে।ছেলে স্বামীও সব করে। রান্নার কাজ স্বামী করে। গোসল করি কাপড় চোপড় ওরা দিয়ে আসে। তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছিলাম চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে।

সংসারের দুর্ভোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংসারে ক্যাচাল লাগতে পারে। অনেক সময় (স্বামী) বলে আমি থাকবোনা। তোর মন যা চায় তা কর। তখনি খারাপ লাগে। আজ ভালো থাকলে এমন বলার সাহস পেতোনা। আজ পঙ্গু বলে এগুলো বলার সাহস পায়।

এখন একটা ছোট চা দোকান চালান নিলুফার বেগম। তিনি বলেন, তিনটা কিস্তি চালাই। দোকানে মালামালও নেই। সারাদিন বেশিরভাগই রুমে বসে থাকি। ছেলের বয়স নয় বছর। ৭০/৮০ হাজার টাকা ঋণ হইছে। কেমনে শোধ করবো জানিনা। আর কি বলবো। তিনবছর ধরে এসব বলতে বলতে মুখ ব্যথা হয়ে গেছে। -বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই