স্বামীর ফোন চারদিন বন্ধ থাকায় ডা. মিথিলার আত্মহত্যা
স্বামী ডা. মিজানুর রহমানের মানসিক অত্যাচারেই ডা. মিথিলা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
সোমবার বিকেল ৫টার দিকে ডা. মিথিলার লাশ কুমিল্লায় নেওয়ার পথে মোবাইলে আলাপকালে তার মামা খন্দকার আমিনুল হক এ অভিযোগ করেন।
আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন ডা. মিথিলার স্বজনরা।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান শাহবাগ থানায় নিজের নামে মামলার কথা শোনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
খন্দকার আমিনুল হক জানান, গত বছরের পহেলা মে পারিবারিকভাবে নোয়াখালী জেলার মাইজদী থানার ডা. মিজানুর রহমানের সঙ্গে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপার এলাকার ডা. মিথিলার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মিজানুর নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করতেন। বিয়ের পর সেখানেই কিছুদিন থাকেন। নিজেদের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে উভয়ই ঢাকায় চলে আসেন। গত দুই মাস ধরে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডরমেটরির একটি কক্ষে থাকতেন।
আমিনুল হক জানান, তিনি মিজানুর সম্পর্কে মিথিলার কাছ থেকে কোনোদিন খারাপ কিছু শোনেননি। তবে মিথিলা আত্মহত্যা করার পর আব্দুস সাত্তার নামে এক চিকিৎসক তাকে জানান, মিজানুর প্রায়ই স্ত্রীকে বাসায় রেখে বাইরে সময় কাটাতেন। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকতেন। এমনকি দিনের পর দিন বাসায় ফিরতেন না। এ সময় ফোনও বন্ধ রাখতেন তিনি। এটি তার অনেকদিনের অভ্যাস।
খন্দকার আমিনুল হক বলেন, ‘মিথিলা শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। কিছু হলেও মুখ বুজে সহ্য করত। তবে সে তার মাকে জানিয়েছে, মিজান দুপুরে খেতেও আসে না। বাসা থেকে বের হয়ে গেলে একবারও ফোন করে না। অনেক রাত করে বাসায় ফেরে। ভালো-মন্দ কোনো কথাও বলত না। এমনকি অনেক রাতে নাকি বাসাতেই ফিরত না।’
খন্দকার আমিনুল হক মিজানুরের ছোট বোনের স্বামী আব্দুল আজিজের বরাত দিয়ে জানান, মিজানুর গত বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকালে অফিসের কথা বলে বাসা থেকে বের হন। ওইদিন রাতে তিনি বাসায় না ফেরায় রাত ৩টার দিকে তাকে ফোন করেন মিথিলা। তখন ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন।বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার এবং রোববার বাসায় ফেরেননি তিনি। ডরমেটরির ছোট্ট একটি কক্ষে মিথিলা একাই রাতের পর রাত পার করেছেন। মিথিলা রোববার দুপুরে আজিজকে ডেকে বিএমএ ভবনে পাঠিয়েছেন মিজানুরকে খোঁজার জন্য। আজিজ বিএমএ ভবনে গিয়ে জানতে পারেন মিজানুর সেখানে নেই। সেখানে উপস্থিত মিজানুরের বন্ধু জানিয়েছেন, সে তো এ রকমই। আজ আবার নতুন কি? দেখেন বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে হয়তো কোথাও আড্ডা পেটাচ্ছেন। আজিজ ফিরে গিয়ে মিথিলাকে এসব ব্যাপারে জানান। মিথিলা এসব শোনার পর চুপ করে ছিলেন।
আমিনুল হকসহ মিথিলার অন্য স্বজনদের ধারনা, দিনের পর দিন মিথিলাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন মিজানুর। ফলে মিথিলা একপর্যায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
পরিবারের বিষয়ে মিথিলার মামা আমিনুল হক জানান, মিথিলা তার পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তার বড় ভাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইফতেখার জাহান মেহেদি বর্তমানে মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কর্মরত। মিথিলা বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। সেখান থেকেই গত বছর ইণ্টার্নি করে বের হন।
এক প্রশ্নের জবাবে আমিনুল হক বলেন, মিজানুরের কোনো পরকীয়া ছিল কি না, তা আমি জানি না।এ ব্যাপারে মিথিলা কোনোদিন অভিযোগ করেনি। এমনকি মিজানুরও মিথিলার কোনো সমস্যা আছে কি না, তা জানায়নি।
ওই চার দিন মিজানুর কোথায় ছিলেন, তা আপনি জানতে চাননি, এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল বলেন, ‘হ্যাঁ, মিথিলা আত্মহত্যা করার পর জিজ্ঞাসা করেছিলাম। মিজানুর বলেছে, চট্টগ্রাম থেকে বন্ধু-বান্ধব এসেছিল তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি।’
মিজানুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে মামলার বাদী মিথিলার আরেক মামা খন্দকার শরিফুল হক জানান, মিজানুর আইনের হাত থেকে বাঁচতে এরকম বাহানা করছে। তা ছাড়া সে তো ওই হাসপাতালেরই ডাক্তার।
অন্যদিকে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মিথিলার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক(ওসি তদন্ত) জানান, মিথিলা আত্মহত্যার ঘটনায় মামা শরিফুল হক বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত চলছে। মিজানুর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই