সেদিন থেকে তার কষ্টের জীবন শুরু

পাঁচ বছর আগে তার মা তাকে ছেড়ে এসেছিলেন ঢাকায়। এরপর কখনো মায়ের সঙ্গে তার দেখা হয়নি। তার মা ছেড়ে আসার পর তার বাবা আবার বিয়ে করে নতুন সংসার পাতেন। নিজের মা-ও বিয়ে করেন ঢাকায়। এক বছর আগে ফোনে মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তখন সে তার মাকে জানায়, সৎমা তাকে নির্যাতন করেন। সে আর বাবার সঙ্গে থাকবে না। এরপর থেকে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তার ফোনে কথা হতো। গত শুক্রবার তাঁর মা তাকে ঢাকার ফার্মগেটে আসতে বলেন।

মায়ের কথামতো ছেলেটি শনিবার বিকেলে ফার্মগেটে নেমে মায়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু মায়ের মোবাইল বন্ধ পায় ছেলেটি। এরপরও মায়ের মোবাইল খোলা পায়নি। একপর্যায়ে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় বাসায় ঘুরে মাকে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা শহীদুল হক নামের এক ব্যক্তি ছেলেটিকে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যান। ছেলেটি এখন টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রয়েছে।

ছেলেটির নাম মনির হোসেন আবির (১৪)। তাঁর বাবার নাম আবদুল মান্নান। মায়ের নাম দুলালি বেগম। বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম উত্তরপাড়ায় ছেলেটি বসবাস করত। রোববার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক রুহুল আমিন ছেলেটিকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে ছেলেটিকে আদালতে হাজির করে প্রতিবেদন জমা দেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল আজাদ।

আদালত এলাকায় মনির হোসেন আবির বলেন, যেদিন তার মা তাকে ছেড়ে আসেন, সেদিন থেকে তার কষ্টের জীবন শুরু। সৎমা তাকে নির্যাতন করেন। তখন মায়ের সঙ্গে থাকার জন্য তার মন ছটফট করত। মনে করেছিল, সে তার মায়ের সঙ্গে বসবাস করবে। কিন্তু কপাল খুব খারাপ। চোখ মুছতে মুছতে আবির বলছিল, মায়ের কাছে যেতে চায় সে। সে যে কারাগারে আছে, এ খবর যেন তার মাকে দেওয়া হয়। আবির বলে, সে সাবগ্রাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। তার রোল নম্বর ১২।

পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা শহীদুল হক বলেন, আবির নামের ছেলেটি সন্ধ্যার দিকে তাঁর বাসায় এসে বলে, দুলালি নামের কেউ তাঁর বাসায় কাজ করেন কি না। এরপর তখন ছেলেটি এক গ্লাস পানি খেতে চায়। একপর্যায়ে ছেলেটি তার মাকে খুঁজতে ঢাকায় আসার কথা বলে। তার মা দুলালি বেগম ফার্মগেট এলাকার কোনো এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। তার মাকেও খুঁজে বের করতে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুঁজে না পাওয়ায় তাকে থানায় দিয়ে দেন। ছেলেটিকে তাঁর সৎমা নির্যাতন করেছেন জানিয়ে শহীদুল হক আরও বলেন, ছেলেটির শরীরে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে সে মায়ের খোঁজে ঢাকায় এসেছে। যখন ছেলেটি তার মায়ের মোবাইল বন্ধ পেল, তখন সে পূর্ব রাজাবাজারের প্রতিটি বাসায় গিয়ে নিজের মায়ের খোঁজ করেছে।

জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস বলেন, ছেলেটির মাকে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছেলেটির আত্মীয়স্বজনকেও খুঁজে বের করা হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই