সেক্স চ্যাটে এগিয়ে কলকাতার স্কুলছাত্রীরা

‘সাবালক’ হয়েছে শহর৷ কিন্তু সমীক্ষা রিপোর্টের তথ্য বলছে, সেই সাবালকত্ব আসছে সময়ের আগেই৷ আর এই অকাল সাবালকত্ব শহরে এক নয়া ট্রেন্ডেরও হদিশ দিচ্ছে৷ কী সেই সমীক্ষা? কী বলছে তার রিপোর্ট? তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর এক সংস্থার করা সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, কলকাতায় বসবাসকারী মহিলাদের মধ্যে সেক্সচ্যাটের প্রবণতা বেড়েছে৷ নজরে পড়ার মতো বিষয়, সেই প্রবণতা সব থেকে বেশি বেড়েছে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীদের মধ্যে৷ যে পরিসংখ্যানে কলকাতা পিছনে ফেলে দিয়েছে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, এলাহাবাদের মতো শহরকে৷ যা একদিকে যেমন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের, অন্য দিকে কিছু মন্দের ভালোও খুঁজে পাচ্ছেন সমীক্ষকরা৷ সব মিলিয়ে এই নতুন ট্রেন্ডে ধরা দিয়েছে নগরযাপনের এক অন্য দিক৷

বেঙ্গালুরু, এলাহাবাদ, দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বই এই পাঁচ শহরে মোট ৫ হাজার তরুণীর মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছে ‘ওয়েবরুট’ নামের সংস্থাটি৷ ফিনল্যান্ডের তুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে যৌথ ভাবে সমীক্ষা চালায় তারা৷ এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক যৌন জীবনের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করা৷

অনলাইন ও ফিল্ড সার্ভে- দুই পদ্ধতিতেই পাঁচ শহরের প্রত্যেকটিতে এক হাজার মহিলা নাগরিকদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছে সংস্থা৷ যেখানে ছিলেন একাদশ-দ্বাদশের ছাত্রী থেকে শুরু করে মধ্য ত্রিশের মহিলারা৷ কাজটি শেষ করতে ছ’মাসেরও বেশি সময় লেগেছে বলে দাবি তাদের৷ কী বলছে রিপোর্ট? সংস্থার মুখ্য সমীক্ষক অরিন্দম সেনগুপ্ত বলছেন, ‘সেক্সচ্যাট করেন কি না, এটা আর পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিল৷ অবাক করা বিষয় হল, ওই প্রশ্নের জবাবেই মেয়েরা সব থেকে বেশি মুখ খুলেছেন৷ যা থেকে আমরাও বুঝতে পারলাম, এতদিন যা চলত একেবারেই রেখেঢেকে, সে বিষয়েই মুখ খুলতে বেশি আগ্রহী এই বড় শহরগুলির মেয়েরা৷’

সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, এলাহাবাদে সব থেকে বেশি তরুণী সেক্সচ্যাট সম্পর্কে মুখ খুলেছেন৷ স্যাম্পেল সাইজের ৪০ শতাংশ মহিলা স্বীকার করেছেন, তাঁরা তাঁদের প্রণয়ী, স্বামী বা পার্টনারের সঙ্গে সময় পেলেই বিভিন্ন চ্যাটিং অ্যাপ, এসএমএস বা ভিডিও অ্যাপের মাধ্যমে সেক্সচ্যাট করেন৷ যার শুরুটাও অনেকাংশে মহিলারাই করে থাকেন বলে দাবি সমীক্ষকদের৷ অরন্দিমবাবু এ প্রসঙ্গে অন্য একটি মাত্রাও জুড়ে দিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘এলাহাবাদের ফলাফলে যে এই ট্রেন্ড এতটা ধরা পড়বে, তা আমাদের ধারণায় ছিল না৷ কারণ, এখানে সমাজ এখনও সাবেকিয়ানায় ভরপুর৷ অথচ সেক্সচ্যাটে মুখ খোলা তরুণীরা কিন্ত্ত বেশিরভাগই গৃহবধূ৷’

কলকাতার চিত্রটি কী? এই শহর সেক্সচ্যাটের স্বীকারোক্তিতে অবশ্য রয়েছে তিন নম্বরে৷ এলাহাবাদের পর বেঙ্গালুরুর মহিলারা সব থেকে বেশি স্বীকার করেছেন, তার পরই রয়েছে কলকাতা৷ এখানে স্যাম্পেল সাইজের ২৮ শতাংশ মহিলা স্বীকার করেছেন তাঁরা নিয়মিত সেক্সচ্যাট চালান৷ কিন্ত্ত ২৮ শতাংশের মধ্যে আবার ১৬ শতাংশ মেয়েই কিন্ত্ত স্কুলপড়ুয়া৷ এক্ষেত্রে আবার কলকাতা পাঁচ শহরের মধ্যে সবার উপরে৷ মূলত শহরের অভিজাত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীরাই অকপটে এ কথা স্বীকার করেছে৷

কেন সেক্সচ্যাটে আগ্রহ ছাত্রীদের? সমীক্ষক সংস্থার বক্তব্য, এই প্রশ্নটিও অপশনাল হিসেবে রাখা হয়েছিল ওই সমীক্ষা প্রশ্নপত্রের মধ্যে৷ সেখানে অনেক ছাত্রীই দাবি করেছে, মূলত তিনটি কারণের জন্য এই পন্থা বেছে নিয়েছেন তাঁরা৷ প্রথমত, যার সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বা তৈরি করার ইচ্ছে রয়েছে, সেই ছেলেটির সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন জানা৷ অর্থাৎ, পার্টনারের যৌন চেতনা কী রকম, তার একটি আগাম আন্দাজ করে প্রয়োজনে সাবধানী পদক্ষেপের প্রস্তুতির জন্য৷

দ্বিতীয়ত, সময় কাটাতে এর মতো ‘এনজয়ব্ল’ বাক্যালাপ হয় না বলেই মনে করছে তিলোত্তমার অনেক স্কুলছাত্রীরা৷ এতে পরবর্তী সময়ে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে আগাম রুট ম্যাপ থাকছে বলে মতামত বহু স্কুলপড়ুয়ার৷ তৃতীয়ত, বহু স্কুল ছাত্রীরাই সরাসরি যৌন সম্পর্কে যেতে চায় না৷ ফলে যৌন সম্পর্কের দ্বিতীয় একটি পন্থা বের করতেই এই পদ্ধতি অনেকে বেছে নিয়েছেন৷

তবে এই শহরের এই নয়া ট্রেন্ড একটি উদ্বেগও বাড়িয়েছে৷ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ভাবে হোয়াটস অ্যাপ-ফেসবুক বা চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে সেক্সচ্যাট যদি বেহিসেবি ক্রমে বাড়ে, তা হলে বিভিন্ন ব্যক্তিগত কথা, ছবি, ভয়েস বা ভিডিও সংগ্রহের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেলের প্রবণতা বাড়তে পারে৷ যা পরে নানা বিপদের কারণও হতে পারে বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের৷



মন্তব্য চালু নেই