‘ভাবিনি তোমার সাথে দেখা হবে’

বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার ৭০ দিন পর দেখা হল স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সাথে। শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেখা করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় দেখা হয় দু’জনার। সংবাদ বিবিসি বাংলা।

দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর সাক্ষাতের আবেগঘন মুহূর্তে দু’জন দু’জনকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। সেখানে উপস্থিত সবার চোখেই পানি চলে আসে। স্ত্রীকে কাছে পেয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কখনও ভাবিনি তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে এনেছেন।’

বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি জানান, দু’জনে কথা বলেছেন একান্তে। চিকিৎসা ও আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন সালাহ উদ্দিন। প্রায় আধা ঘণ্টা তাদের মধ্যে কথা হয়। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে হাসিনা আহমেদ তার স্বামীর চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

সালাহ উদ্দিনকে চিকিৎসার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো অথবা দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আজ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে ১১ মে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে সন্ধান পাওয়ার পর এ প্রথম সালাহ উদ্দিন আহমদের মুখের কথা শোনা গেল। শিলং সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল (ইউটিপি) প্রিজন সেল থেকে সোমবার দুপুরে সিটি স্ক্যান করতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের মূল ভবনে। এ সময় হাসপাতালের বারান্দায় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির এ নেতা। কেমন আছেন জানতে চাইলে তার ছোট্ট জবাব, ‘এখনও জীবিত আছি।’

কিভাবে শিলংয়ে এলেন, কিছু মনে করতে পারেন কিনা, জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন ধীরে ধীরে বলেন, ‘আমার তো চোখ বান্ধা ছিল, হাত বান্ধা ছিল। একটা লং জার্নি। মনে হয়, ১২-১৪ ঘণ্টার হবে। ২ ঘণ্টা হয় তো স্টপেজ ছিল, মনে হয়। এখানে শিলং গলফ কোর্সের পাশে আমাকে ফেলে রাখে।

তারপর কিছু লোককে বললাম, আমাকে একটু পুলিশ স্টেশনের দিকে নিয়ে যাও অথবা পুলিশে খবর দাও, আমার এই-এই অবস্থা।’ স্বেচ্ছায় নয়, চোখ ও হাত বেঁধে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাকে শিলংয়ে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্বেচ্ছায় থানায় এসেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ তখন তারা পুলিশকে কল করল। আমি গেলাম। তো তাদের আমার হিস্ট্রি বলার পর তারা হয় তো মনে করেছে, আমি মেন্টাল পেশেন্ট।’

দেশে ফিরতে চান, নাকি আরও চিকিৎসা করাতে চান- জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘দেশে তো এখন রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা গভর্নমেন্টের উচিত হয়নি। আমি তো কোনো, মানে সাজাপ্রাপ্ত দাগী অ্যাবসকন্ডিং (ফেরারি) কোনো আসামি না। তো, কেন করছে, আমি তো জানি না।’ এ সময় তিনি দেশে ফিরতে চান বলে জানান। ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় বা চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো দেশে আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

জনি বলেন, হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা আহমেদ। প্রায় আধা ঘণ্টা পর দু’জনে কিছুটা স্বাভাবিক হন। এ সময় ছেলেমেয়ের খোঁজখবর নেন সালাহ উদ্দিন। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ আরও অনেকের কথাই জানতে চান। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আগের চেয়ে সালাহ উদ্দিনকে বেশ প্রফুল্ল মনে হয়েছে বলে জানান জনি।



মন্তব্য চালু নেই