সুপ্রিম কোর্টে রিকশা প্রবেশে কড়াকড়ি
দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘বাড়তি সতর্কতার’ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে গত সপ্তাহজুড়ে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। সর্বশেষ বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টে রিকশা প্রবেশ নিষিদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট সূ্ত্রে জানা গেছে, ১১ ও ১২ জুলাই পর পর দুই দিনে একাধিক বৈঠক করেছেন প্রধান বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবীসহ সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সঙ্গে প্রশাসন এবং প্রধান বিচারপতির একাধিক বৈঠক হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে রিকশা প্রবেশ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রোববার আবারো বৈঠক হবে আইনজীবীদের। তার পরই রিকশা প্রবেশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, যদি সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে রিকশা সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়, তবে তার সীমা কোন পর্যন্ত থাকবে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে গত সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা পুরো আদালত অঙ্গনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন। এক মাস অবকাশের পর গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কর্মদিবসের বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন উচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির নেতারা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।
গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আদালত পাড়ার নিরাপত্তা নিয়ে তৎপরতা বেড়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার নিরাপত্তার বিষয়টিকে তাদের পূর্ব থেকে গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতার অংশই মনে করেন। তবে সাম্প্রতিক ঘটনা যে সেই কাজের গতিকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে সে কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বহিরাগত চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সদস্য নন, এমন শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারীদের জন্য পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা হবে। ক্রমান্বয়ে আদালতের মূল ভবনে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সেই সঙ্গে আদালত চত্বরে যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রেও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বলেন, বিচারক, আইনজীবী ও কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কারো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তবে আইনজীবীদের বার অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত স্টিকার ব্যবহার করতে হবে। নির্দিষ্ট স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়ি আদালত অঙ্গনে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। আর গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আইনজীবী সমিতির পাশের খালি জায়গা ঠিকমতো পরিষ্কার করা হবে। প্রয়োজনে কিছু ছোট গাছ কেটে পার্কিংয়ের জায়গা বাড়ানো হবে।
যদিও রিকশা প্রবেশ নিয়ে আইনজীবী সমিতির নেতাদের মধ্যে ভিন্নমতও ছিল বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে। সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন রিকশা প্রবেশের সুযোগ দেয়ার পক্ষে মত দিলেও অন্যরা বিরোধিতা করেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত রিকশা প্রবেশে সুযোগ না দেয়ার পক্ষেই সিদ্ধান্ত হয়।
আদালতে যারা প্রবেশ করেন তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণও জোরদার হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাব্বির ফয়েজ বলেন, আদালতের বিভিন্ন প্রান্তে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এখন যেসব ক্যামেরা আছে, তা মনিটরিং ঠিকমতো হয় না। সেই মনিটরিংয়ের জন্য এখন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে দুটি মূল ফটকের এন্ট্রি পয়েন্টে অটো স্ক্যানার বসানো হবে।
তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে কতজন সদস্য আছেন তা আমরা জানতে চেয়েছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছে দুই শিফটে আলাদাভাবে ১২৪ জন আদালত এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন।
গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন রমনা জোনের ডিসিসহ সিভিল পুলিশ, গণপূর্ত বিভাগসহ নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুটি বৈঠকেই বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ।
তিনি বলেন, সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের দুটি গেট ছাড়া বাকি প্রবেশ পথসমূহ বন্ধ করে দেয়া হবে। আইনজীবী সমিতির সামনে সোনালী ব্যাংকের পাশে নিচতলা ও তার ঠিক উপরে দোতলার গেটি খোলা থাকবে। তবে বিচারকদের প্রবেশের জন্য উত্তর পাশের দুই প্রান্তের দুটি পকেট গেট খোলা থাকবে।
এছাড়া এনেক্স (অতিরিক্ত) ভবন ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সামনের মূল গেট ছাড়া বাকি সকল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হবে। মূল ও এনেক্স ভবনের তিনটি গেটে বড় আকারের ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
সাব্বির ফয়েজ জানান, আদালত এলাকায় যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের অনেক সময় নির্ধারিত স্থানে পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে কে কোথায় কর্তব্যরত তার ম্যাপ আমরা চেয়েছি। এছাড়া আদালতের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকেও নিজস্ব কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
বার ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনজীবী সমিতি নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; সন্ধ্যা ৭টার পর নিরাপত্তা প্রহরী ব্যতীত সেখানে কেউ অবস্থান করতে পারবে না। তবে এই সিদ্ধান্ত সমিতিই বাস্তবায়ন করবে বলে নিশ্চিত করেন সাব্বির ফয়েজ।
সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি সারাদেশের অধস্তন আদালতের নিরাপত্তা জোরদারেও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি নির্দেশনা অধস্তন আদালতসমূহে পাঠানো হয়েছে। ওই নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিতেও বলা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই