সুন্দরবনে তেল দূষণে উদ্বিগ্ন ভারত

বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার পর শ্যালা নদীতে ব্যাপক তেল ছড়িয়ে পড়ারর ঘটনায়  উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের সামুদ্রিক বিজ্ঞানী, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মী এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ তেল দূষণ দু’দেশের জীব বৈচিত্রের ওপর ক্ষতিকর ব্যাপক ফেলতে পারে।

তেল দূষণ ঠেকাতে ভারত ইতিমধ্যে বনবিভাগের কর্মী, সীমান্ত সেনা এবং উপকূলীয় রক্ষীদের সতর্ক অবস্থায় রেখেছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ভারতের সুন্দরবন প্রাণিমণ্ডল সংরক্ষণ বিভাগের উপপ্রধান প্রদীপ বিশ্বাস বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় তেল ছড়ানোর বিষয়ে পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। তিনি বলেন,‘আমরা সব ধরনের পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ভারতীয় উপকূলরক্ষী ও সীমান্ত রক্ষীরা (বিএসএফ) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন নদীগুলোতে নৌকাযোগে টহল দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশের এই তেল দূষণ পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস করতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেছেন। তার আশঙ্কা সত্যি হলে এ অঞ্চলে মৎস সম্পদ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে যার ফলে মৎস্যচাষীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেরবে। এছাড়া ম্যানগ্রোভ বৃ্ষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুন্দরবনের জলপথে সব ধরনের বাণিজ্যিক চলাচল নিষিদ্ধ করার জন্য বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর শেলা নদীতে বাণিজ্যিক নৌচলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েল ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের (বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার) এ্ই বনের প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন।

সুন্দরবনের জলপথে সব ধরনের বাণিজ্যিক চলাচল নিষিদ্ধ করার জন্য বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর শেলা নদীতে বাণিজ্যিক নৌচলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার।gbmeb5hc সুন্দরবনে তেল দূষণে উদ্বিগ্ন ভারতএ সম্পর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিভাগের গবেষক সুগতা হাজরা বলেছেন,‘তেল অনেক দূর অব্দি গড়িয়ে যেতে পারে যা নির্ভর করে বাতাসের বেগ এবং স্রোতের গতির ওপর। বাংলাদেশে নদির স্রোত এসব তেল খাঁড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সাড়ে তিন লাখ লিটারের এই তেল ম্যানগ্রোভ জঙ্গলটির ব্যাপক ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা করছি। যদিও এসব তেল ভারতের সুন্দরবন এলাকা থেকে এখনও বেশ দূরে রয়েছে।’

তবে সুগতার আশঙ্কা এই তেল দূষণ কেবল সুন্দরবন নয়, বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীব বৈচিত্র্যের ওপরও ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এখানকার সামুদ্রিক জীবকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দূষণের কারণে দ্বীপের কচ্ছপ ও মূল্যবান মাছ বিশেষ করে ইলিশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  ।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বন্যপ্রাণী পরামর্শক বোর্ডের সদস্য বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীও। তিনি বলেন, এ তেল দূষণের কারণে মধ্যমাকৃতির ‘অলিভ রিডলে’ কচ্ছপ এবং ডলফিনের বিচরণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তার ভাষায়,‘ এ সময় এ কচ্ছপ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে ছুটে আসে এবং সুন্দরবন এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু এ তেল দূষণ তাদের এ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।  তিনি এ প্রাণীটির অভিবাসন প্রক্রিয়ার ওপর জরিপ চালানোরও আহ্বান জানিয়েছেন।

6onp4i6h সুন্দরবনে তেল দূষণে উদ্বিগ্ন ভারতএদিকে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এই দূষণের ঘটনায় শুধু বন বিভাগের রক্ষীদের নয়, সতর্ক অবস্থায় রাখ হয়েছে ভারতের সীমান্ত সেনা এবং উপকূলীয় রক্ষীদেরকেও। তারা সেখানকার সুন্দরবন সংলগ্ন হরিণভাঙা এবং রাইমঙ্গল নদি দুটোর ওপরও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। কেননা এ নদি দুটো বাংলাদেশের জলসীমার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর আগে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশেও এ ধরণের ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় তেল নি:সরণের ঘটনা ঘটেছিল। তখন ভারতের কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার সময়মত তৎপর হওয়ায়  মেনগ্রোভ বনটি সে যাত্রায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পেরেছিল।



মন্তব্য চালু নেই